আজ থেকে প্রায় ২০০ বছর আগের ঘটনা। আরও নির্দিষ্টভাবে বললে একশো সাড়ে আটানব্বই বছর প্রায়। ১৮২২ সালের ১৫ জুলাই। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট শুরু হয়নি তখনও। ইংল্যান্ডের ঐতিহাসিক লর্ডস মাঠে ক্রিকেট ম্যাচে মুখোমুখি কেন্ট ও এম.সি.সি দল।
কেন্টের বোলিং ইনিংসের প্রথম বল সম্পন্ন। আম্পায়ার বলে উঠলেন, “নো বল!” রেগে গেলেন বোলার। আম্পায়ারের সঙ্গে চোখের ভাষা বিনিময়। ক্ষোভে বলটা মাটিতেই ছুড়ে মারলেন তিনি। মাঠ থেকে ঘোড়ায় করে প্রস্থান করলেন বোলার।
যেই বোলারের ঘটনা বলছিলাম, তাঁর নাম জন উইলস। ভদ্রলোক সেদিন শুধু মাঠ হতে প্রস্থানই করলেন, তাই নয়৷ এরপর আর জীবনেও ক্রিকেট খেলতে মাঠে যাননি তিনি। তাঁর সেই বলটাকে ‘নো বল’ ডাকার কারণ ‘রাউন্ড আর্ম’ বল। সেই সময়ে প্রচলিত ছিল কেবলই ‘আন্ডার আর্ম’ বল। হাত উঠানো যাবে না কনুইয়ের উপর। কেউ হাত ঘুরিয়ে বল করবে, এই বিষয়টা যেন তখন কল্পনারও অতীত৷
জন উইলসের এই ‘রাউন্ড আর্ম’ বোলিংয়ের ধারণা পাওয়ার গল্পটা একটু বৈচিত্র্যপূর্ণই। ক্রিকেট পাগল জন উইলস বোন ক্রিশ্চিয়ানা উইলসের বাড়িতে গিয়ে বোনের সাথেই মেতে উঠতেন ক্রিকেটে। বোন ক্রিশ্চিয়ানার পোশাক ছিল কোমরের কাছে সরু আর পায়ের কাছে ছাতার মতো। এতে বল করতে গেলেই বল আটকে যেতো জামায়। এই সমস্যা কাটাতে বল করতেন হাতটা কাঁধের পাশ দিয়ে ঘুরিয়ে। উইলস সেখান থেকেই পেলেন ‘রাউন্ড আর্ম’ বলের ধারণা। ক্রিশ্চিয়ানা উইলসকেই বলা যায় বর্তমান প্রচলিত ‘রাউন্ড আর্ম’ বলের আবিষ্কারক।
জন উইলস তাঁর বোনের থেকে রপ্ত করা পদ্ধতির প্রয়োগ করা শুরু করলেন বন্ধুদের সাথে। ব্যাটসম্যানদের জন্য এসকল বল মোকাবিলা হয়ে উঠে দুরূহ। ফলে ব্যাটসম্যানরা বিরোধিতা করলো উইলসের। এই ধরনের বল নিয়ে শুরু হয় ব্যঙ্গ করাও৷ শুনতে হয় কটু কথাও৷ দর্শকরা দিতেন দুয়োধ্বনি।
এইরকম অবস্থা থাকা সত্ত্বেও ১৮২২ সালের ১৫ জুলাই ‘রাউন্ড আর্ম’ করেন জন উইলস। সেদিনের বাকি কাহিনী উল্লেখ আছে উপরেই। এই জন উইলসই পৃথিবীর প্রথম ‘রাউন্ড আর্ম’ বোলার। ফলে ক্রিকেট ইতিহাসে জন উইলস একজন গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রই বটে। ক্রিকেটের চেহারাই যে বদলে দিয়েছিল তাঁর করা বল।
তাঁর ক্রিকেট ছাড়ার পরবর্তীতে ‘রাউন্ড আর্ম’ নিয়ে হয়েছে বিভিন্ন তর্ক বিতর্ক। তাঁর ঘটনা দ্রুতই ছড়িয়ে পড়ে বিভিন্ন স্থানে। অনেক দলই প্রয়াস চালায় ‘রাউন্ড আর্ম’ এবং ‘ওভার আর্ম’ বোলিংয়ের। বহু বিতর্কের অবসান শেষে জন উইলস ‘রাউন্ড আর্ম’ ডেলিভারি করার ৪২ বছর পর ১৮৬৪ সালে তৎকালীন ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রকেরা স্বীকৃতি দেয় ‘রাউন্ড আর্ম’ বোলিংকে।
কালের বিবর্তনে ক্রিকেটের রঙ অনেক বদলেছে। জন উইলসের যে ‘রাউন্ড আর্ম’ ডেলিভারি ঘোষিত হয়েছিল ‘নো বল’, আজ সেই ডেলিভারিগুলোই প্রসিদ্ধ। বরং ক্রিকেটে অবৈধ ঘোষিত হয়েছে ‘আন্ডার আর্ম’ বল।
লিখাটি পাঠিয়েছেন – মহিবুল হক নাঈম।