শুধুই কি একটা ম্যাচ! যার প্রতিটি পরতে পরতে ছড়িয়ে রোমাঞ্চ। উত্তেজনায় ঠাসা; ভরপুর শিহরণ! ২২ গজের পেরিয়ে উত্তেজনায় কম্পমান পুরো গ্যালারি। আতংকিত পুরো দেশ তাকিয়ে টিভি পর্দায়। প্রতি হৃদ স্পন্দনে যেন প্রার্থনা আর চোখ-মুখে প্রশ্ন- পারবে তো বাংলাদেশ?
উহ! খুঁজেই পাচ্ছেন নাহ কোন ম্যাচের কথা বলছি? মাথায় হয়তো অসংখ্য স্মৃতি ঘুরপাক খাচ্ছে। হয়তো ভাবছেন বিশ্বকাপের ইংল্যান্ড বদ বা নিদাহাস ট্রফির স্মৃতি! না তেমন কোনো ম্যাচ নয়, বলছিলাম ২০০৯ সালের নভেম্বরে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে খেলা একটি ওয়ানডে ম্যাচের কথা।
স্মরণ নেই কি হয়েছিলো সেদিন? কি হয়েছিলো সেই মাহেন্দ্রক্ষণে? খানিকটা স্মরণ করি আর স্মৃতি মন্থন করে সেই রোমাঞ্চের স্বাদ অনুভব করি।-
জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে সেদিন সিরিজের পঞ্চম ওয়ানডে ম্যাচে টস ভাগ্য হেরে টেলরের সেঞ্চুরি তে জিম্বাবুয়ের দেয়া ২২২ রানের লক্ষ্যে ব্যাটিং বিপর্যয়ে বিদ্ধস্ত বাংলার বাঘেরা ১৮৭ রানেই হারিয়ে ফেলে ৯ উইকেট!
জয়ের উদ্দেশ্যে শেষ উইকেটে ৩৫ রান প্রয়োজন ৩১ বলে। ক্রিজে ৪০ রানে অপরাজিত নাঈম ইসলাম; শেষ সঙ্গী হিসাবে যোগ দিয়েছেন পেসার নাজমুল হোসেন।
নাঈম কি পারবেন ম্যাচটি ছিনিয়ে আনতে? বিদ্ধস্ত তরীখানা উপকূলে পৌছুতে? ভয়ে কম্পমান তবে স্বপ্নে ভাসমান তখন স্পন্দন!
হ্যাঁ নাইম পেরেছিলেন; পেরেছেন ভাঙা নৌকায় জয়ের বন্দরে নোঙ্গর তুলতে। দারুণ দক্ষতায় একক কুশলতায় ম্যাচটি বের করে এনেছেন; তৃপ্ত করেছেন প্রতিটি হৃদয়।
প্রয়োজনীয় ৩৫ রানের ৩৩-ই এসেছে নাইম ঝড়ে!ঝড়ই নয় তো কি? এই ৩৩ এসেছে যে মাত্র ২১ বলে; ৪ টি বিশাল ছয়ের মারে! তার মাঝে পরপর তিন বলে তিনটি করেছেন গ্যালারী ছাড়া! এ যেন ছক্কা নাঈম’ নামকরণের সার্থকতা!
অবশ্য, ছক্কা নাইম নামটার সুত্রপাতে কোনো আন্তর্জাতিক ম্যাচের ভূমিকা নেই ; ঘরোয়া ক্রিকেটে মার্শাল আইয়ুবকে ওভারের প্রতি বলে অর্থাৎ ৬ বলে ৬ ছক্কা মেরে বাংলার ক্রিকেটাঙ্গনে “ছক্কা নাইম” তকমা পান।
অনবদ্য এই পারফরম্যান্সে ম্যাচ সেরাও নির্বাচিত হন নাইম ইসলাম। অবশ্য একবার সিরিজ সেরা হবারও সুযোগ এসেছিলো তব দ্বারে; তবে ভাগ্য হেরফেরে তা আর জুটেনি স্বীয় ললাটে।
২০১৩ সালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সেবার সিরিজে উভয় দলের পক্ষে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক ছিলেন নাইম। পারফরম্যান্স বিবেচনায় স্বয়ং দলীয় অধিনায়ক মুশফিক তাকে অগ্রীম সিরিজ সেরার শুভেচ্ছা জানান! তবে যখন ঘোষণায় মুশফিক স্বীয় নাম শুনে বিস্মিত হন ও তা প্রকাশও করেন।
২০০৮ সালে অভিষেকের পর যেকোন পজিশনে তার ব্যাটিং করার ক্ষমতা, অফস্পিন বোলিং আর দুর্দান্ত ফিল্ডিংয়ে জাতীয় দলের ‘অটোমেটিক চয়েজ’ এ পরিনত হয়েছিলেন নাইম।
তবে কোচ জেমি সিডন্সেরও বিদায়ের পর, দলের প্রয়োজনে যেকোন পজিশনে ব্যাটিং করাই তার জন্য কাল হয়ে দাড়ায় ও পারফরম্যান্সে প্রভাব প্রকাশিত হয়। পজিশন চেঞ্জের পাশাপাশি নিয়মিত সুযোগ না আসারও আক্ষেপ ছিলো বহমান!
ওয়ানডেতে ৫১ ইনিংস ওপেনিং থেকে আট (৪ ব্যাতিত) সকল পজিশনেই ব্যাট করতে হয়েছে নাঈমকে। অপরদিকে প্রিয় পজিশন ৫ নম্বরে সুযোগ এসেছে মাত্র ৬ ম্যাচে যাতে রয়েছে, দুটো ফিফটি আর ক্যারিয়ার সেরা ৮৪! সর্বাধিক ২৬ বার খেলেছেন আট নম্বর পজিশনে।
১ম পর্বে (নাইম ইসলাম: হার না মানা তিনিও একজন) তার টেস্ট অধ্যায় নিয়ে বলেছিলাম; লিখেছিলাম সেঞ্চুরি করেও পরবর্তীতে আর সুযোগ না পাবার আক্ষেপের কথা! তবে টেস্ট ক্যারিয়ারে ২০১২ সালে বাধা আসলেও রঙিন পোষাকে ব্রাত্য ২০১৪ সাল থেকে!
বাংলাদেশ জাতীয় দলের হয়ে ৫৯ টি ওয়ানডে ম্যাচে ২৭.০৯ গড়ে ৯৭৫ রান আর ৩৫ উইকেট। ৮ টেস্টের ১৫ ইনিংসে ৩২ গড়ে ৪১৬ রানেই থমকে আছে তার ক্যারিয়ার; অপেক্ষায় আছে আরও একটা সুযোগের!
সেই ২০১৪ থেকে পেরিয়ে গেছে দীর্ঘ ৬ বছর; পরিবর্তন এসেছে বাংলার ক্রিকেটে। হোচট খাওয়া দেশটা এখন দৌড়াতে শিখেছে! উন্নতি হয়ে পারফরম্যান্সে, এসেছে উন্নতমানের ক্রিকেটার। ক্রিকেট ইতিহাসে প্রতিনিয়ত সংযোজন হচ্ছে নতুন ইতিহাসের লিখা হচ্ছে গৌরবগাঁথা!
তবে বদলায়নি একজন। সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে দমে যাননি তিনি, স্বপ্নের মাঝে ফাটল ধরেনি এখনো।
সেই আগের মতোই স্বপ্ন- লক্ষ্যে পারি দিতে শক্তহাতে লড়ে চলেছেন দিন পেরিয়ে মাস; বছরের পর বছর ঘরোয়া ক্রিকেট মঞ্চ!
নাইম ছুটে চলছেন অনবরত; নব উদ্যমে প্রতিনিয়ত! একটা নেশায় আর একটা আশায়! ক্রিকেটে সুখের নেশা আর স্বপ্ন ছোয়ার আশায়। পরিবর্তন এনেছেন স্বীয় স্পৃহায়। ছক্কার মার থেকে এখন পরিনত সাদা জার্সি গায়ে; শুধুই একটা সুযোগের প্রত্যাশায়!