পুরো সিরিজেরই যেন চিত্রনাট্যের দেখা মিললো ব্রিসবেনে, শেষ পর্যন্ত বীরত্বের সিরিজে অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে দিলো ভারত। গ্যাবা টেস্টে তাদের জয় ৩ উইকেটের ব্যবধানে, এই জয়ে ৪ ম্যাচের বোর্ডার-গাভাস্কার ট্রফি ২-১ এ জিতে নিলো আজিঙ্কা রাহানেরা।
প্রথম টেস্টে হেরে সিরিজ শুরু করেছিল ভারত, এরপর দলের সেরা ব্যাটসম্যান ও অধিনায়ক ভিরাট কোহলির ছুটিতে যাওয়া ও একের পর এক পেসারদের চোটে পড়ায় একাদশ গড়া নিয়েই দেখা দিয়েছিল ভারতের।
তবে এই দলটা যে ভিন্ন ধাতে গড়া, সেটাই প্রতিটা ম্যাচেই প্রমাণ করেছে ভারত। সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে জিতে সিরিজে সমতায় ফিরে, এরপর সিডনিতে বীরত্বের গল্প জয়ের সমান ড্র তুলে নিয়ে সিরিজে সমতা ধরে রাখে আজিঙ্কা রাহানের দল। এরপর তো ব্রিসবেনে রেকর্ডই গড়লো, ৩২ বছরে যা করে দেখাতে পারেনি কোন দল সেটাই করে দেখালো ভারত।

ব্রিসবেনে শেষ দিনে জয়ের সুযোগ ছিল দুই দলের সামনেই, তবে শেষ পর্যন্ত দুর্দান্ত লড়াইয়ের পর ড্র নিয়ে মাঠ ছাড়ে অস্ট্রেলিয়া ও ভারত। যার ফলে সিরিজ সমতায় শেষ করে ট্রফি ধরে রাখতে সক্ষম হলো ভারত, নিজেদের মাটিতে ভঙ্গুর ভারতকে পেয়েও ট্রফি পুনরুদ্ধার করতে পারলো না অজিরা।
বিনা উইকেটে ৪ রান নিয়ে দিনের খেলা শুরু করেন ভারতের দুই ওপেনার রোহিত শর্মা ও শুভমান গিল, দিনের শুরুতেই রোহিতকে ফিরিয়ে অজিদের এগিয়ে নেন প্যাট কামিন্স। তবে দ্বিতীয় উইকেটে চেতশ্বর পুজারাকে সাথে গিল নিয়ে ১০৪ রান যোগ করলে ঘুরে দাঁড়ায় ভারতীয় ক্রিকেট দল।
এদিন দুর্দান্ত ব্যাট করেছেন তরুণ শুভমান গিল, তবে টেস্ট ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি থেকে মাত্র ৯ রান দূরে থাকতে আউট হয়ে যান তিনি। নাথান লায়নের বলে স্টিভেন স্মিথের হাতে ক্যাচ দেওয়ার আগে ১৪৬ বল খেলে ৮ চার ও ২ ছক্কায় ৯১ রানের ইনিংস খেলেন গিল।
অধিনায়ক আজিঙ্কা রাহানে ২২ বলে ২৪ রান করে আউট হলে জয়ের আশা দেখতে পায় অস্ট্রেলিয়া, তবে এদিনও দৃঢ় প্রতিজ্ঞ ছিলেন চেতশ্বর পুজারা। একপাশে দলকে নির্ভরতা দিয়েছেন, হতাশা উপহার দিয়েছেন অজি বোলারদের।
হাঁকিয়েছেন টেস্ট ক্যারিয়ারের সবচেয়ে ধীরগতির ফিফটি, ১৯৪ বলে ফিফটি পাওয়া পুজারা প্যাট কামিন্সের বলে আউট হওয়ার আগে ২১১ বল খেলে ৭ চারে করেন ৫৬ রান। তবে ফিরে যাওয়ার আগে রিশাভ পান্তের সাথে যোগ করেন গুরুত্বপূর্ণ ৬১ রান।
ধীরগতির ব্যাট করলেও দলকে নিরাপদ জায়গায় পৌঁছানোর পাশাপাশি জয়ের সম্ভাবনাও তৈরি করে দিয়ে যান চেতশ্বর পুজারা, সেখান থেকে চেষ্টা চালিয়ে যান রিশাভ পান্ত। পঞ্চম উইকেটে মায়াঙ্ক আগারওয়ালকে নিয়ে ৩৭ রান যোগ করেন পান্ত, মায়াঙ্কের ব্যাট থেকে আসে ৯ রান।
এরপরই ভারত তাদের আসল চরিত্র দেখায়, রিশাভ পান্তের সাথে যোগ দেন প্রথম ইনিংসের নায়ক ওয়াশিংটন সুন্দর। ষষ্ঠ উইকেটে দুজনে যোগ করে ম্যাচ জেতানো ৫৫ বলে ৫৩ রান, ২৯ বলে ২ চার ও ১ ছয়ে ২২ রান করে সুন্দর আউট হলেও শেষ কাজটা সেরে ফেলেন ম্যাচের নায়ক বনে যাওয়া রিশাভ পান্ত।
শার্দুল ঠাকুর ২ রান করে আউট হলেও ভারতের জয়ে সেটা প্রভাবই ফেলতে পারেনি, জশ হ্যাজেলউডের বলে ৪ মেরে দলের জয় নিশ্চিত করে রিশাভ পান্ত। তার ব্যাট থেকে আসে ১৩৮ বলে ৯ চার ও ১ ছয়ে অপরাজিত ৮৯ রান, ভারত জয় পায় ৩ উইকেটের ব্যবধানে।
এর আগে প্রথম ইনিংসে মারনাস ল্যাবুশানের সেঞ্চুরিতে ৩৬৯ রানের সংগ্রহ গড়ে অস্ট্রেলিয়া, জবাবে ওয়াশিংটন সুন্দর ও শার্দুল ঠাকুরের দুর্দান্ত ফিফটিতে ৩৩৬ রান করে ভারত। দ্বিতীয় ইনিংসে অস্ট্রেলিয়াকে ২৯৪ রানে গুটিয়ে দিয়ে জয়ের সম্ভাবনা তৈরি করে রাখে ভারত, ক্যারিয়ার সেরা বোলিংয়ে ৭৩ রান দিয়ে ৫ উইকেট নেন মোহাম্মদ সিরাজ।
সংক্ষিপ্ত স্কোরঃ
অস্ট্রেলিয়া ১ম ইনিংসঃ ৩৬৯ (মারনাস ল্যাবুশান ১০৮, টিম পেইন ৫০, থাঙ্গারাসু নাটারাজন ৩/৭৮, ওয়াশিংটন সুন্দর ৩/৮৯, শার্দুল ঠাকুর ৩/৯৪) এবং ২য় ইনিংসঃ ২৯৪ (স্টিভেন স্মিথ ৫৫, ডেভিড ওয়ার্নার ৪৮, মোহাম্মদ সিরাজ ৫/৭৩, শার্দুল ঠাকুর ৪/৬১)।
ভারত ১ম ইনিংসঃ ৩৩৬ (ওয়াশিংটন সুন্দর ৬২, শার্দুল ঠাকুর ৬৭, রোহিত শর্মা ৪৪, জশ হ্যাজেলউড ৫/৫৭)
এবং ২য় ইনিংসঃ ৩২৯/৭ (শুভমান গিল ৯১, রিশাভ পান্ত ৮৯* চেতশ্বর পুজারা ৫৬, প্যাট কামিন্স ৪/৫৫)।
ম্যান অফ দ্যা ম্যাচঃ রিশাভ পান্ত
ম্যান অফ দ্যা সিরিজঃ প্যাট কামিন্স।
সিরিজঃ ভারত ২-১ ব্যবধানে জয়ী