বাংলাদেশ ফুটবলে মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব এক ঐতিহ্য ও ইতিহাসের নাম। দেশ বা দেশের বাইরে সুনাম কুড়িয়েছে বহুবার। স্বাধীনতার পর আবাহনী বাংলার ফুটবলে যোগ দেওয়ায় বাড়তি উন্মাদনার সৃষ্টি হয় দুই দলকে কেন্দ্র করে। সে সময় আবাহনী – মোহামেডান ম্যাচ মানেই গ্যালারি ভর্তি দর্শকের উন্মাদনা দেখা যেতো। ১৯৮০ সাল থেকে মোহামেডান – আবাহনী ম্যাচের এই উন্মাদনার সাক্ষী হয়ে আসছে মহাপাগল সমর্থক গোষ্ঠী।
যেখানেই মোহামেডান সেখানেই এই মহাপাগল সমর্থক গোষ্ঠীকে এক নজরের জন্য হলেও দেখতে পাওয়া যাবে। ঠিক তেমনি গত কাল (বৃহস্পতিবার) কুমিল্লার শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত স্টেডিয়ামের পশ্চিম গ্যালারিতে খুজে পাওয়া গেলো মহাপাগল সমর্থক গোষ্ঠীকে। এই সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা সদস্য জনাব টি ইসলাম তারিকের সাথে কথা হয় ডেইলিস্পোর্টসবিডির।
মোহামেডান যেন তাদের ধ্যান ধারণা। সাদা-কালোদের ম্যাচ মানে যেভাবেই হোক গ্যালারিতে বসতেই হবে, দেখতে হবে ম্যাচ। নিজেদের জীবনের একটা অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে আছে এই মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব। ১৯৮০ সাল থেকে এখন পর্যন্ত মাত্র দুইটি ঢাকা ডার্বি দেখতে না পাওয়া টি ইসলাম তারিক জানান, “একবার গোপালগঞ্জ ও আরেকবার ভারতে অনুষ্ঠিত হওয়া ঢাকা ডার্বি দেখতে পায়নি, তাছাড়া এখন পর্যন্ত বাকি সব ডার্বি ম্যাচ মাঠে বসেই দেখেছি। ঢাকা ডার্বি যেখানেই হোক না কেন প্রতিপক্ষ যেখানে আবাহনী সেখানে আমরা থাকবো না, তা কি করে হয়?”

এক, দুই বা দশ বছর নয়, প্রিয় ক্লাবকে সমর্থন দিয়ে আসছে দীর্ঘ চল্লিশ বছরের বেশি সময় ধরে। এই দীর্ঘ সময়ে নিজ ক্লাবের ভাল,মন্দ উভয় সময়েরই সাক্ষী এই মহাপাগল সমর্থক গোষ্ঠী। জনাব টি ইসলাম তারিক আরো জানান, “দলের সোনালী সময় গ্যালারিতে ছিলাম। দুঃসময়ও চেষ্টা করেছি পাশে থাকতে। সাদা-কালো জার্সির ঐতিহ্য এবং মর্যাদা অনেক। কত বড় বড় তারকারা এই দলের হয়ে খেলেছেন। লাখো দর্শককে ফুটবল উম্মাদনায় মাতিয়েছেন। গ্যালারি থেকে প্রিয় দলকে সমর্থন দেওয়াই আমাদের মূল লক্ষ্য। বিনিময়ে সুন্দর ফুটবল দেখতে চাই।”
প্রিয় দল মোহামেডানকে সমর্থন দিতে তারিকের সঙ্গে হাজির হয়েছিলেন সংঠনের উপদেষ্টা দেশ বরেণ্য ফটো সাংবাদিক নাজমুল আমিন কিরন, ক্রীড়া সাংবাদিক জাহিদুল আলম জয় সহ সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য শাহিন সামি, শফিকুল ইসলাম, তারিকুর রহমান, মোহাম্মদ ইমরান, পাপন, বশির ও রাসেল। এরা সবাই ঢাকা থেকে নিজ খরচে কুমিল্লায় প্রিয় দলের ম্যাচ দেখতে গিয়েছিলেন। এ ব্যাপারে টি ইসলাম জানান, “আমাদের সংগঠনে তালিকাকৃত কোন সদস্য নেই, নেই কোন সভাপতি বা সেক্রেটারি তবুও আল্লাহর রহমতে আমরা নিজেরাই বড় কোন প্রোগ্রাম শেষ করতে পারি। এছাড়া ক্লাব থেকেও আমরা কোন প্রকার অর্থ নেই না।”
ব্যতিক্রমধর্মী মোহামেডান সমর্থকবৃন্দ মহা পাগল শুধু গ্যালারিতেই সীমাবদ্ধ তা কিন্তু নয়। ঢাকা ডার্বি নিয়ে ব্যতিক্রম কিছু উপহার দেওয়ার জণ্য তারা একটি বই প্রকাশ করতে যাচ্ছে। যার নাম ‘রূপকথার মোহামেডান আবাহনী’।
বইটিতে স্মৃতিচারণ করা হয়েছে দুই দলের সমর্থক, খেলোয়াড়, সাংবাদিকসহ প্রায় ৮৫ জন ক্রীড়া প্রেমী মানুষদের নিয়ে।
বাংলার ফুটবল জাগরণে এমন মহাপাগল সমর্থক প্রতিটা ক্লাবে গড়ে উঠা দরকার। এমন মহাপাগলদের কারণেই বাংলার ফুটবল আবারো জাগ্রত হবে।