চ্যাম্পিয়ন্স লীগে ইতিহাস, ঐতিহ্যে এগিয়ে থাকলেও সাম্প্রতিক সময়ের পারফরম্যান্স ও ইঞ্জুরি সমস্যার কারণে আটালান্টার বিপক্ষে বেশ কঠিন পরীক্ষা দিতে হবে মাদ্রিদিস্তাদের। ইউরোপ সেরার মঞ্চে এবারই প্রথম মুখোমুখি হচ্ছে দুদল। বস্তুত, নিজেদের চ্যাম্পিয়ন্স লীগের ইতিহাসে মাত্র দ্বিতীয়বার স্প্যানিশ দলের বিপক্ষে মুখোমুখি হতে যাচ্ছে আটালান্টা। গেল বছর শেষ ষোলোয়ে স্প্যানিশ ক্লাব ভ্যালেন্সিয়াকে দুই লেগ মিলিয়ে ৮-৪ গোলে হারিয়ে কোয়ার্টার ফাইনাল নিশ্চিত করে লা দিয়াসরা।
সেভিয়ার পর আটলান্টাই চ্যাম্পিয়নস লীগের ইতিহাসে প্রথম দল যারা নিজেদের প্রথম দুই ইউরোপ সেরার আসরে ব্যাক টু ব্যাক নক আউট স্টেজ নিশ্চিত করেছে।যদিও চলতি মৌসুমে চ্যাম্পিয়ন্স লীগে ঘরের মাঠে কেবল একটি জয় চিন্তায় ফেলবে স্বাগতিকদের। তবে, এই প্রতিযোগিতায় আটলান্টার সর্বশেষ ১৫ ম্যাচে গোলশূন্য ড্র না হওয়া বড় স্কোরের ম্যাচ হওয়ার দিকে ইঙ্গিত দিচ্ছে। আর ইতালিয়ান সিরি’আয় নাপোলির বিপক্ষে পিছিয়ে পড়েও ৪-২ গোলের জয় আটালান্টাকে বাড়তি অনুপ্রেরণা দিবে।
রিয়াল মাদ্রিদকে ইউরোপের রাজা বলা হয়। ইউরোপ সেরার আসরে সবচেয়ে সফলতম দলটি এই নিয়ে রেকর্ড ২৪তম বার নক আউট স্টেজে খেলতে নামবে। ইঞ্জুরির দীর্ঘ তালিকা থাকলেও এই প্রতিযোগিতায় ইতালিয়ান ক্লাবগুলোর বিপক্ষে সর্বশেষ ৫টি অ্যাওয়ে ম্যাচ জয় বাড়তি অনুপ্রেরণা দিবে লস ব্লাংকোসদের। তাছাড়া, ইতালিয়ান দলগুলোর বিপক্ষে সর্বশেষ ১৯ ম্যাচেই গোলের দেখা পেয়েছে সর্বোচ্চ ১৩ বারের ইউরোপ সেরারা। চ্যাম্পিয়ন্স লীগের ইতিহাসে নক আউট স্টেজে মাদ্রিদের গোলসংখ্যা ৯৯টি। আর মাত্র একটি গোল করতে পারলে ইতিহাসের প্রথম ক্লসব হিসেবে মর্যাদার এই আসরের নক আউট স্টেজে শততম গোলের মাইলফলক স্পর্শ করবে স্পেনের শীর্ষস্থানীয় ক্লাবটি।
মৌসুমের শুরুর ধকল কাটিয়ে উঠলেও ইঞ্জুরির দীর্ঘ তালিকা রয়েছে রিয়াল মাদ্রিদের স্কোয়াডে। মাত্র ১২ জন সিনিয়র ফুটবলার নিয়ে ইতালিতে পাড়ি দিয়েছে জিদানের দল। তবে শেষ মুহুর্তে নিয়মিত পারফর্মার করিম বেনজেমার অনুপস্থিতিতে ভোগাবে রিয়াল মাদ্রিদকে। চ্যাম্পিয়ন্স লীগের নক আউট স্টেজে সর্বশেষ ছয় ম্যাচে ৫ গোল করেছে এই ফরাসি তারকা। তাছাড়া, প্রতিযোগিতার সর্বকালের সর্বোচ্চ গোলদাতা ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর পর করিম বেনজেমাই একমাত্র ফুটবলার যার বাঁ পা, ডান পা ও মাথায় দশ বা তার অধিক গোল করেছে।
ইঞ্জুরির কারণে দলের বাহিরে আছে ইডেন হ্যাজার্ড, সার্জিও রামোস, মার্সেলো, রদ্রিগো, এডার মিলিতাও, দানি কার্ভাহাল ও ফেডে ভালভার্দের মত নিয়মিত একাদশের গুরুত্বপূর্ণ ফুটবলাররা। তাছাড়া, আর মাত্র একটি হলুদ কার্ড দেখলে এক ম্যাচের জন্য নিষিদ্ধ হবে মিডফিল্ডার ক্যাসিমেরো। যা রিয়াল মাদ্রিদের মধ্যমাঠও মনস্তাত্ত্বিকভাবে পিছিয়ে রাখবে।
অন্যদিকে, ইঞ্জুরির কারণে আটালান্টার রাইটব্যাক হ্যান্স হেটবার রিয়াল মাদ্রিদের বিপক্ষে ম্যাচটি মিস করলেও সেরা একাদশ সাজাতে কাঠ পোহাতে হবে না কোচ পিয়েরো গেসপেরিনিকে। কার্ডজনিত সমস্যায় ক্রিস্টিয়ান রোমেরো ও বেরাত ডিমিস্তিকে নিয়ে কোন রিস্ক নিতে চাইলে আজ সুযোগ পেতে পারে ডিফেন্ডার জীসে লুইস পালোমিনো।
রাতে উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লীগে শেষ ষোলোর অন্য ম্যাচে মাঠে নামবে উড়তে থাকা ম্যানচেস্টার সিটি ও জার্মান ক্লাব বরুশিয়া মুনশেনগ্লাডবাখ। ম্যাচটি জার্মানিতে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও করোনার ব্যাপক প্রটোকলের কারণে উয়েফা তা দুদলের সম্মতিতে হাঙ্গেরীতে স্থানান্তর করে। ফলে ঘরের মাঠের যে কোন বাড়তি সুবিধা ছাড়াই হাঙ্গেরীর পুসকাস এরেনায় মুনশেনগ্লাডবাখ আতিথ্য দিবে ম্যানচেস্টার সিটিকে। বাংলাদেশ সময় রাত দুটোয় মাঠে নামবে দুদল। তাই বলা যায়, সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে ফুটবলপ্রেমিদের জন্য আরও একটি জমজমাট রাত অপেক্ষা করছে।