২০২২ সালে কাতারে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ‘দ্য গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ’। ফুটবল বিশ্বকাপ। বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলার ২২তম আসর উপলক্ষ্যে মধ্যপ্রাচ্যের দেশটিতে গত এক দশকে চলছে এক বিরাট মহাযজ্ঞের। সাতটি নতুন স্টেডিয়ামের পাশাপাশি কয়েক ডজন বড় প্রকল্পের নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে বা নির্মাণাধীন রয়েছে বলে জানা যায়। যদিও এই আয়োজনে প্রবাসী শ্রমিকদের সঙ্গে মানবাধিকার লঙ্ঘন করা হচ্ছে বলে বহু দিন ধরেই অভিযোগ করে আসছে বিভিন্ন সংগঠন। এবার, দ্য গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে চমকে দেওয়া এক তথ্য।
ব্রিটিশ প্রভাবশালী এই দৈনিক পত্রিকার এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে জানা যায়, বিশ্বকাপ আয়োজনে কাতারে গত এক দশকে দশ হাজারের বেশি দক্ষিণ এশিয়ান শ্রমিকের প্রাণ গিয়েছে। এসময় প্রবাসী বাংলাদেশি শ্রমিকের মৃত্যুর সংখ্যা ১০১৮জন। ইংলিশ পত্রিকাটিতে ২০১১ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে। এতে পাকিস্তান বাদে ৪টি দেশে গার্ডিয়ানের নির্ভরযোগ্য সূত্র ও দেশগুলোর সরকারি অনুযায়ী দশ বছরে ৫ হাজার ৯২৭ জন প্রবাসী শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। তবে, কাতারে পাকিস্তানের দূতাবাস থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, এ সময়ে ৮২৪ জন পাকিস্তানি শ্রমিক মারা গেছেন মধ্যপ্রাচ্যের এ দেশে।

বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, নেপাল ও শ্রীলঙ্কার সরকারি পরিসংখ্যানের বরাত দিয়ে এ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে গার্ডিয়ানে। এতে বলা হয়, ওই পাঁচ দেশের কাতারস্থ দূতাবাস ও অন্যান্য সরকারি কার্যালয় থেকে পাওয়া তথ্য মতে জানা গেছে, ২০১০ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে ভারতের ২,৭১১ জন শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। একই সময় বাংলাদেশের ১,০১৮ জন প্রাণ হারিয়েছেন কাতারে। এই দশ বছরে নেপালের ১,৬৪১, পাকিস্তানের ৮২৪ ও শ্রীলংকার ৫৫৭ জনের মৃত্যু হয়েছে কাতারে। উল্লেখ্য, মৃত্যুর প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে বলে দাবি করা হয়েছে প্রতিবেদনটিতে।
গার্ডিয়ানের এই প্রতিবেদনে জানা যায় যে এই সময় বাংলাদেশ, ভারত ও নেপালের যতজন মারা গেছেন, তার ৬৯ ভাগকে স্বাভাবিক মৃত্যু বলে দাবি করে কাতার সরকার। ১২ ভাগের মৃত্যু সড়ক দুর্ঘটনায়। শুধু ৭ ভাগের মৃত্যুর সঙ্গে কাজের পরিবেশ জড়িত। আর ৭ ভাগ কর্মী আত্মহত্যা করেছেন। ভারতীয়দের ক্ষেত্রে ৮০ ভাগই নাকি স্বাভাবিক মৃত্যু। যদিও অনুসন্ধানী এই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কাতারে প্রবাসী শ্রমিকদের বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই লাশের ময়নাতদন্ত করতে দেওয়া হয় না।
এত মৃত্যুর কারণ অনুসন্ধানে ২০১৯ সালে জানা যায়, মূলত কাতারের প্রচন্ড তাপমাত্রা শ্রমিকদের মৃত্যুতে বড় প্রভাব রাখছে। জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক শ্রমিক সংঘটনের গবেষণায় পাওয়া গেছে, বছরের অন্তত চার মাস তীব্র দাবদাহের মধ্যে কাজ করতে হয় শ্রমিকদের। যা ৩০ বছর বয়সী বেশি শ্রমিকদের হৃদরোগে আক্রান্তের অন্যতম কারণ।
স্টেডিয়ামের নির্মাণকাজে জড়িত শ্রমিকদের মৃত্যুর ব্যাপারে গার্ডিয়ান কথা বলেছিল দায়িত্বপ্রাপ্তদের সঙ্গে। শ্রমিকদের মৃত্যুতে দায়িত্বপ্রাপ্তরা দুঃখিত হলেও গার্দিয়ানের সব অভিযোগ তারা প্রত্যাখান করে। গার্দিয়ানকে তারা জানায়, “আমরা এসব ঘটনায় গভীরভাবে দুঃখ প্রকাশ করছি এবং সব ক্ষেত্রেই তদন্ত করেছি, যেন এ থেকে শিক্ষা নেওয়া যায়। আমরা এ বিষয়ে বরাবর স্বচ্ছতা বজায় রেখেছি এবং আমাদের প্রকল্পে মৃতের সংখ্যা নিয়ে ভুল যে দাবিগুলো করা হয়েছে, সেগুলোর প্রতিবাদ করেছি।”