এই দেশ আমার, এই দেশ আমাদের, এই দেশ ১৬ কোটি মানুষের। আমরা এই দেশকে ভালোবাসি। এই দেশে জন্মেছি। আলো, বাতাস, রূপ, রস, গন্ধ, স্পর্শ—সব আমরা মিলেমিশে অনুভব করছি। ক্রিকেট আর দেশপ্রেম কখনই এক সুতোয় আবদ্ধ নয়। শুধুই ক্রিকেটারদের জন্য দেশ প্রেম নয়। দেশ প্রেম সবার জন্য। সবাইকেই দেশকে ভালোবাসতে হবে।
যদিও লেখা বা বলার প্রয়োজনে আমরাই দেশ প্রেম দিয়ে ক্রিকেটারদের সমাদর করে থাকি। ক্রিকেটে দেশ প্রেম খুঁজি। হ্যাঁ, প্রতিটি ক্রিকেটারেরই দেশ প্রেম আছে, কিন্তু সেই দেশ প্রেম তৈরী হয়েছে ক্রিকেটার হিসেবে নয়, বরং এই দেশের নাগরিক হিসেবে। এই দেশের আভা গায়ে মেখে বড় হয়েছে বলে। আর ক্রিকেট হলো তাদের পেশা। অন্যসব পেশার মতোই একটা পেশা।
অন্যান্য পেশাজীবিরা যেমন মাস শেষে বেতন নেন, সাকিব, মাশরাফীরাও নেন। পার্থক্য হলো এর নাম ‘খেলা’ এবং যা প্রকাশিত হয়, প্রচারিত হয়। তবে দিনশেষে সবাই বেতনভুক্ত চাকুরিজীবী। যারা বেতন পাননা, তারাও টাকার বিনিময়েই খেলেন। সুতরাং, অন্যান্য পেশাজীবিরা যেমন তাদের স্থান থেকে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে, ক্রিকেটাররাও ক্রিকেট খেলে দেশের নাম উজ্জ্বল করছে।
বলতে পারেন, তামিম তো ভাঙা হাতে বল খেলেছে। মাশরাফী পঙ্গু হবার ভয় থাকা সত্ত্বেও খেলে গেছে, সাকিব হাতে পুঁজ নিয়ে খেলেছে কিংবা অন্যায়ের প্রতিবাদ করেছে। এগুলো কেন? এগুলো তো দেশকে ভালোবেসেই করেছে। হ্যাঁ, দেশকে ভালোবেসেই করেছে। কিন্তু এইটা তার বা তাদের দায়িত্বও বটে। কারণ তারা দেশের ১৬ কোটি মানুষকে প্রতিনিধিত্ব করছে। কিন্তু তারা?
হ্যাঁ, তাদের কথাই বলছি, যারা বুড়ো বয়সেও অফিসের ফাইল নিয়ে এক তলা থেকে পাঁচ তালায় উঠে আর নামে? যাদের সমাজ নাম দিয়েছে পিয়ন। যারা কল কারখানায় কাজ করতে গিয়ে হাত বা পা খুইয়েছে? যাদের সামাজিক নাম শ্রমিক। যারা দেশের নিরাত্তার জন্য নিজের জীবন বিলিয়ে দেয়, সমাজে যাদের নাম আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। যারা ইট পাথরে গাথু্ঁনি দিয়ে দেশের সমৃদ্ধি প্রকাশ করে, সমাজে যাদের নাম রাজমিস্ত্রী। বা যারা কাঠ কাটে কিংবা রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে দেশকে খাদ্যশস্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করে, যাদের আমরা বলি কৃষক।
কিন্তু কেন? ক্রিকেটাররা যেমন খেলাধূলা তথা বিনোদনে আমাদের দেশকে এগিয়ে নিয়ে যায়, (যা ছাড়াও চলা সম্ভব), তেমনি তো তারাও দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। বরং তাদের সহায়তা ছাড়া দেশের উন্নয়ন অসম্ভব। তবে কেন তাদের দেশপ্রেমিক বলা হয়না? সাকিব, তামিমরা যদি হাত পায়ে ব্যথা নিয়ে খেলে দেশ প্রেমিক হয়ে যায়, তবে তারা শত বাধাঁ আর ব্যথা নিয়ে আমাদের জীবন যাত্রার মান উন্নয়ন করেও দেশপ্রেমিক তকমা পায়না? ওরাও তো দেশের প্রতিনিধিত্ব করে। ওরাও তো দেশকে ভালোবাসে।
কেন পায় না আমি বলি। কারণ সমস্যা আমাদের মাঝে। গলদ আমাদের সিস্টেমে। আমরা বাস্তবতা দেখি না, আমরা গা ভাসাই আবেগে। তারচেয়ে বড় কথা আমরা নিজেদের থেকে অন্যদের নিয়ে বেশী ভাবি। হয়তো বলবেন এইটা নিঃস্বার্থতা। কিন্তু বাস্তবতা বলে ভিন্ন কথা। আমি সাকিব, মুস্তাফিজের দেশপ্রেম নিয়ে প্রশ্ন তুলি, কিন্তু আমার দেশপ্রেম কতো দূর, তার খবর আছে কি?
নিজের কর্মক্ষেত্রে নিজে সৎ ও সঠিক আছি তো? নিজের বিবেককে প্রশ্ন করুন। নিজেকে বুঝুন আপনি সর্ব প্রকার দূর্নীতির উর্দ্ধে তো? ওহ ভালো কথা, গাড়িতে বসে চিপস আর ড্রিংক খেয়ে বোতল আর প্যাকেটটা কে যেন রাস্তায় ছুড়ে ফেলেছিল? অন্যের মাঝে দেশপ্রেম খুঁজছেন ঠিকই, কিন্তু নিজের খাওয়া কলার খোসাটা ঠিকই জানালা দিয়ে হাত বাড়িয়ে রাস্তায় ফেলছেন। কেন, এটা জায়গা মতো ফেলা কি দেশ প্রেমের অংশ না? আসলে আমরা এখন নিজের থেকে অন্যকে নিয়ে ভাবতে বেশী পছন্দ করি। এই ক্ষেত্রে তামিম ইকবালের ওই কথাটা বলাই যায়, “আপনি দেশের জন্য কি করেছেন?”