বিষাণ বেজে চলেছে। বাইশগজের যোদ্ধারা কাতারবন্দি হয়ে পাশাপাশি দাড়িঁয়ে। অতঃপর শুরু হলো বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথের সেই বাঙালী কণ্ঠে অমরত্ব পাওয়া সেই গান ‘আমার সোনার বাংলা..আমি তোমায় ভালোবাসি’। প্রিয় গানের কথামালা কানে পৌঁছা মাত্রই লাল-সবুজের বাইশগজের ওই প্রতিনিধিরা বুকে হাত রেখে কেউবা নিশ্চুপ দাঁড়িয়ে মনযোগী শ্রোতা বনে, আবার কেউবা কণ্ঠ মেলায় সম-স্বরে। গ্যালারির ওই দর্শক, সমর্থকরাও নেই বসে। ওরাও দাঁড়িয়ে সোনার বাংলা গায় দেশের প্রতি ভালোবাসা মনে।
মাইকে বাজছে সেই সঙ্গীত, পাশে উড়ছে লাল-সবুজের পতাকা। আশপাশে সবার মুখে তৃপ্তির হাসি। কিন্তু গলায় পদক পড়ে স্যালুট তুলে দাড়িয়ে দাড়িয়ে আকুল হয়ে কেঁদে যাচ্ছেন দক্ষিণ এশীয় গেমসে বাংলাদেশের জন্যে প্রথম স্বর্ণপদক এনে দেয়া কিশোরী মেয়েটি। —২০১৬ সালে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এক মিনিটব্যাপী এই ভিডিওটি দেখেছেন এবং শেয়ার করেছেন বহু মানুষ।
কেন এমন কান্না? মনে আছে কি? মেয়েটা বলেছিল, এটা আমার প্রথম স্বর্ণপদক। আশাই ছিল না পদক জেতার। এরপর যখন পুরস্কার মঞ্চে উঠি, মাইকে বাজছিল ‘আমার সোনার বাংলা’। পাশে জাতীয় পতাকা উড়ছিল। সবকিছু মিলে কান্নাটা দমাতে পারছিলাম না।
আমার সোনার বাংলা শুধুই একটি গান নয়, একটি জাতির পরিচয়। একটি জাতির জাতীয় সঙ্গীত। মূলতঃ দেশাত্মবোধে উজ্জীবিত কোন গানকে রাষ্ট্র আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিলে জাতীয় সংগীত বলা হয়৷ বিশ্বের প্রতিটি দেশের জাতীয় সংগীতের সঙ্গে আছে সেই দেশের সংগ্রাম, আত্মত্যাগ আর গৌরবগাঁথা৷ আমাদের জাতীয় সংগীতেরও আছে বর্ণাঢ্য অধ্যায়৷ আমরা তো সেই জাতি, যেই জাতি তার ভাষার জন্য রক্ত দিয়েছে, যে জাতি বাংলা মায়ের মুখের ভাষায় কথা বলবে জীবন দিয়েছে। রক্তের বিনিময়ে পাওয়া বাংলা তাই প্রাণের ভাষা।
যাহোক, শুধু ওই বাইশগজের ক্রিকেটাররা নন, শুধুই স্বর্ণজয়ী মাবিয়া নয়, সকল ইভেন্টের সকল খেলার সব খেলোয়াড়েইরা বাংলা ভাষা বিশ্বের বুকে ফেরি করে বেড়াচ্ছেন নানান সময়ে নানা ভাবে। শুনে হয়তো কখনো আপনি আপন মনে হেসে উঠেন, যখন শুনেন মুস্তাফিজের জন্য ওয়ার্নার বাংলা শিখতে শুরু করেছে! তাছাড়াও নানা দেশে চষে বেড়ানো ক্রীড়াবিদরা বাংলা ভাষার বিস্তার করতে নিঃসন্দেহে ভূমিকা রাখছে।
আজ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে ‘৫২ র ভাষা শহীদদের আত্মার মাগফেরাত কামনার পাশাপাশি আমার সোনার বাংলা গানটা বিশ্বের বুকে ছড়িয়ে দিতে ভূমিকা রাখায় সকল ক্রীড়াবিদদের প্রতি রইলো কৃতজ্ঞাময় ভালোবাসা। শুভেচ্ছা রইলো বাংলা লিখনিতে ক্রীড়ার প্রতি মুহুর্তের নিউজ ও বিশ্লেষণ করে সারাদেশে বাংলা আবহ তৈরী করা সাংবাদিক ভাইদের জন্যও। চলুন ভাষার আজ বিশেষ দিনে সবাই স্মরণ করি ভাষা শহীদদের। স্বম-স্বরে গেয়ে উঠি, ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারী….
নোটঃ ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনে ‘আমার সোনার বাংলা‘সহ বাউল সুরে কিছু গান লেখেন কবি রবীন্দ্রনআথ৷ সে বছর ৭ আগস্ট বঙ্গভঙ্গের প্রতিবাদে কলকাতার টাউনহলে গানটি প্রথম গাওয়া হয়৷ ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল তৎকালীন কুষ্টিয়া জেলার আম্রকাননে বাংলাদেশ সরকার গঠনের সময় গানটিকে জাতীয় সঙ্গীতের মর্যাদা দেয়া হয়।