সম্পাদকীয় কলাম | ওয়াহেদ মুরাদ
সাকিব আল হাসানের কলকাতা নাইট রাইডার্সে ডাক পাবার ঘটনার পর গতকালই বাংলার ফেসবুক টাইমলাইন যেমন আনন্দের বন্যা বয়ে গিয়েছিল ঠিক তেমনি আজকের সাকিবের দেশের টেস্ট না খেলার খবরে চলছে সমালোচনা আর মন খারাপের বাণীও৷
সাকিব আল হাসান শুধু বাংলাদেশের ক্রিকেটের সেরা ক্রিকেটার তাই নয়, সাকিব বাংলাদেশ ক্রিকেটের উত্থানের গল্পের অন্যতম বড় কারিগর। বাংলাদেশ যে সময় একের পর এক ম্যাচ জেতা শুরু করেছে সেগুলোতে বড় অবদান সাকিব আল হাসানের। সাকিবের তুলনা তাই বাকি দেশের ক্রিকেটারদের সাথে চলে না, কারণ এদেশের ক্রিকেটের যেমন সাকিবের প্রতি অনেক অধিকার আছে ঠিক তেমনি সাকিবেরও বাংলাদেশের ক্রিকেটের প্রতি অনেক দ্বায়িত্ব আছে৷

টেস্ট স্ট্যটাস বাংলাদেশ পেয়েছে ২০ বছরের বেশি হয়ে গেছে, এখনও তলানিতে বাংলাদেশ। এমনকি নতুন দল আফগান আর আইরিশদের উত্থান বাংলাদেশের থেকে ভালো। সেখানে সাকিবের দ্বায়িত্ব কি আর দশজন বড় ক্রিকেটারের মতই নাকি সাকিবের দ্বায়িত্ব আরো বেশি? শুধু সাকিবের না, এই একই দ্বায়িত্ব সাকিব ছাড়াও বর্তমান দলের বাকি তিন সিনিয়র ক্রিকেটারের৷
ভারতের কপিল দেব, সুনীল গাভাস্কার কিংবা পাকিস্তানের সাঈদ আনোয়ার, শ্রীলংকার অর্জুনা রানাতুঙ্গার মত সাকিবের দিকে, তামিমের দিকে তাকিয়ে থাকে বাংলার মানুষ। এই ক্রিকেটারদের হাতে বাংলার ক্রিকেট এলিট পর্যায়ে যাবার পথে। এমন সময়ে সাকিবের মত ক্রিকেটারকে অনুপস্থিতির খাতায় দেখতে পাওয়া দেশের ক্রিকেটের জন্য কতটা শুভকর?
দেশের ক্রিকেট কিন্তু অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, ইংল্যান্ডের মত শক্ত অবস্থানে নেই যে বড় কয়েকজন বাদ দিলেও টেস্ট জিতে যাবে! জাতীয় দলের সেরা এগারো জন নামিয়ে দিলেও বাংলাদেশের টেস্ট জিততে নাভিশ্বাস উঠতে হয়। সেখানে বাংলাদেশের সিনিয়র ক্রিকেটারদের দ্বায়িত্ব ঠিক কতটা? টেস্ট না খেলে টি টুয়েন্টি খেলা?

সেক্ষেত্রে স্টোকস, উইলিয়ামসনদের সাথে সাকিবের তুলনা কতটা যৌক্তিক? স্টোকস, উইলিয়ামসনরা এইকালের তাদের দেশের সেরা ক্রিকেটার, সর্বকালের সেরা ক্রিকেটার কিন্তু নন। তারা তাদের দেশের ক্রিকেটকে তুলে ধরছেন না নতুন করে, প্রমাণ করছেন না যে তারা শক্তিশালী। তারা আগে থেকেই শক্তিশালী কিন্তু আমাদের দেশের ক্রিকেটের সব তো এই সাকিবদের হাতেই, তাই না কি? স্টোকসদের ছাড়া ওদের দেশ অসহায় বোধ করে না, কিন্তু সাকিবদের ছাড়া আমরা কিন্তু অসহায়, আমরা জীর্ন। সেখানে সাকিব কি ঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন?
বিসিবি অপারেশন্স চেয়ারম্যান আকরাম খানের বক্তব্য অনুযায়ী বিসিবি ইচ্ছের বিরুদ্ধে কাউকে আর খেলতে বাধ্য করবে না। তারমানে কি দেশের ক্রিকেট বাদ দিয়ে ফ্রাঞ্চইজি ক্রিকেট খেলতে যাবার প্রতি মন আগাগোড়া সবার? সে প্রশ্নের উত্তর খোঁজার প্রয়োজন নেই এখন।
সংবাদমাধ্যমে সাধারন মানুষের আবেগ আর সামাজিক মাধ্যমে মন্তব্যগুলোকে খুব একটা বড় করে দেওয়া হয়না কারণ এগুলো খুব বেশি আনপ্রেডিক্টেবল হয়ে থাকে।
একজন সাধারন মানুষ তার ফেসবুক টাইমলাইনে দুইটা কারণ লিখেছেন যেখানে তার মনে হয়েছে সাকিবের সিদ্ধান্ত ঠিক। প্রথম কারণ হলো, সাকিব এইদেশের মানুষের কাছে সঠিক আচরণ পান না, সিলেটের ঘটনা আর কলকাতার ঘটনায় মাফ চাওয়ার ঘটনা সাকিবকে করেছে ব্যথিত। সেই দেশের জন্য কতটা উদার হবেন সাকিব? এমন প্রশ্নের জবাবে বলতেই হয়, সাকিব যদি এগুলো মনে রাখেন তবে তিনি কেন ভুলে যান – তার নিষেধাজ্ঞার খবরে ১৮ কোটি মানুষ কিভাবে মুচড়ে গিয়েছিল। তিনি কিভাবে ভুলে গেলেন তার ফিরে আসবার দিনগুলোতে মানুষ কিভাবে অপেক্ষার প্রহর গুনেছে যেটা কখনও দেখেনি ক্রিকেট বিশ্ব। তিনি কি করে ভুলে গেলেন, মধ্যরাতে বিমানবন্দরে তাকে বরণ করতে শতশত ভক্তের উপস্থিত থাকা। তিনি কিভাবে ভুলে গেলেন?
দ্বিতীয় কারণ, টি টুয়েন্টি বিশ্বকাপ এবার ভারতে, সেই প্রস্তুতি নিতেই কিনা সাকিবের আইপিএল যাত্রা! মনে রাখা ভালো, এই আইপিএল সাকিবকে গত এক আসরে ম্যাচ খেলারই তেমন সুযোগ দেইনি, বাধ্য সাকিব নিয়েছিলেন তখন দেশের জন্য প্রস্তুতি। কই আইপিএল তো সাকিবের উপকারে আসেনি তখন? সাকিব তো দীর্ঘ সময় ভারতে খেলেছেন, নতুন করে কি চিনবেন তিনি? আসলেও এই যুক্তি কতটা ঠিক আর বাংলাদেশ -ভারতের কন্ডিশনে কি খুব বেশি পার্থক্য?
সাকিবের সিদ্ধান্তে যতগুলো প্রশ্ন উঠছে প্রতিটার উত্তরে প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে সাকিবের দ্বায়িত্ব। বাংলাদেশের টেস্ট ক্রিকেটের খারাপ সময়ে কি করে সাকিব এড়িয়ে যেতে পারেন লাল সবুজের পতাকাকে? সাকিবের প্রতি বাংলার অধিকার কি কমে গেল? অথচ সাকিব বলেছিলেন,
“আইপিএলের পুরো টুর্নামেন্ট জেতার থেকে দেশের হয়ে একটা ম্যাচ জেতা বেশি আনন্দের “
কথাটা কি মন থেকে বলা? তাহলে টেস্ট না খেলার কারণ কি? উত্তর খুঁজছি, আপনি যদি পেয়ে যান তাহলে আপনাকে অভিনন্দন।