রঙধনুর মাঝে যেমন সব রঙ স্পষ্ট দেখা যায় না তেমনি এতো এতো প্রতিভার মাঝেও মিরাজের ব্যাটিং প্রতিভা যেন ভুলতেই বসেছিল বাংলাদেশ। তিনি নিজেই কি নিজের ব্যাটিং স্বত্ত্বাকে জাগিয়ে তুলতে পারেননি নাকি তিনি সেই সুযোগটাই করতে পারেননি সেই প্রশ্নের উত্তর এখন খোঁজা দায়৷
হঠাৎই যখন মিরাজের ফর্ম নিয়ে যখন হাজারটা কথা উঠছিল, সমালোচনার স্রোতের চাপে দলে জায়গা পাওয়া নিয়েই শঙ্কা তৈরী হচ্ছিলো তখনই যেন নিজের ফর্মে ফেরার দারুণ উদাহরণ দেখিয়ে যাচ্ছেন মেহেদী মিরাজ।
ওয়ানডে সিরিজে মিরাজের বোলিংয়ে কতটা উন্নতি তা সাধারন চোখে ধরা না পরলে আইসিসির বোলিং তালিকার দিকে দেখা যেতে পারে। চতুর্থ স্থানে উঠে এসেছেন তিনি। মিরাজের ওয়ানডে আর টেস্টে দুইজন প্রতিদ্বন্দী মিরাজের জায়গাটা নড়বড়ে করে দিচ্ছিলো বেশ। একজনের নাম মাহেদী হাসান, আরেকজন নাঈম।
টেস্টে মিরাজের বোলিং নিয়ে প্রশ্ন উঠবার সুযোগ খুব একটা হয়নি এখনও। তবে ব্যাটিং নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে হরহামেশা। মাঝে মধ্যে মিরাজের নিজের মানসিকতা নিয়েও খালি চোখে সন্দেহ জেগেছে বেশ।
সেকারণেই আজকের ব্যাটিংয়ে মিরাজের খেলা কিছু শট মিরাজকেই বারবার দেখানো দরকার। গ্যাব্রিয়েল, রোচ কিংবা কর্নওয়াল, ওয়ারীকানকে যেভাবে সামলেছেন মিরাজ সেগুলো একজন খাঁটি ব্যাটসম্যানদের সহজাত প্রতিভা।
১৩৫+ গতির বল মিরাজ যেভাবে আজ সামলেছেন, ইচ্ছামত ফ্লিক করেছেন, কবজির মোচড়ে যেসব সুন্দর শট খেলেছেন সেগুলো সত্যিকার অলরাউন্ডার মিরাজের প্রতিচ্ছবি। অনুর্ধব-১৯ এর অধিনায়ক মিরাজের ব্যাটিং ছিল সেই দলের ভরসার প্রতীক। আজকের মিরাজের ব্যাটিংয়ে সেই ভরসা যেন ফুটে উঠেছে।
সোজা ব্যাটে খেলতে পারার দারুন ক্ষমতা আছে মেহেদী মিরাজের। প্রতিপক্ষ কে কিংবা পরিস্থিতি কতটা অনুকূল সেসবকে পাশ কাটিয়ে মিরাজের ব্যাটিং সামর্থ্যের গল্পটা আজ করা উচিত। মিরাজকে নিয়ে করা এত এত হাহাকার, আফসোস পাশ কাটিয়ে রাখবার সময় এসেছে৷
মিরাজ যদি নিজের কারণে জেনুইন ব্যাটসম্যান হতে না পারেন তবে তিনি নিজের প্রতি অন্যায় করবেন৷ এত এত প্রতিভা থাকা স্বত্ত্বেও মিরাজ শুধুই বোলিং এর তকমা নিয়ে থাকতে পারেন না। আর যদি মিরাজকে সেই সুযোগ না দেওয়া হয় তবে সেই ভুল বিসিবিরও। এত বড় প্রতিভা নষ্ট করার মুল্য কিন্তু চোকাতেই হবে।
মনে রাখা দরকার, এক সাকিব আল হাসানের রিপ্লেসমেন্ট পুরো পৃথিবী গত দশকে তেমন বের করতে পারেনি। মিরাজের রিপ্লেসমেন্টও বাংলাদেশ পারবে তো খুজে ফিরতে!
রিপোর্ট লিখার সময় মিরাজের রান ৯৩। হয়ত শিরোনাম ঠিক করতে করতে সেঞ্চুরি করেও ফেলবেন৷ উইকেটের শেষ ব্যাটসম্যান ফিজ কে সাথে নিয়ে সেঞ্চুরির পানে চেয়ে আছেন মিরাজ। পরের ওভারে ওয়ারীকানের বলে প্রথমে চার, পরে দুইরান নিয়ে নার্ভাস ৯৯ রানে পৌঁছান মিরাজ। এরপরই সেঞ্চুরি করেন মিরাজ।
অভিনন্দন মিরাজ।