ইংল্যান্ডের বিপক্ষে দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে ভারতীয় দলে অভিষেক হয় ঈশান কিষাণের, অভিষেকেই দারুণ এক ফিফটিতে হয়েছেন ম্যাচসেরাও। তবে তার এই আজকের অবস্থানে আসার পেছনে আছে কঠিন এক অতীত, যেগুলোকে ডিঙিয়ে ঠিকই সাফল্য খুঁজে নিয়েছেন ঈশান কিষাণ।
১৯৯৮ সালের ১৮ জুলাই বিহারের বুদ্ধগয়ায় জন্ম ঈশান কিষাণের, তার পুরো নাম ঈশান প্রণব কুমার পাণ্ডে কিষাণ। তার প্রথম ক্রিকেট কোচ ছিলেন উত্তম মজুমদার, তিনি বুঝতে পেরেছিলেন বুদ্ধগয়ার মতো ছোট্ট শহরে থাকলে কিছুই করতে পারবে না ঈশান।
কিন্তু সে সময় ঈশানের বয়স মাত্র ১২ বছর, এত ছোট ছেলেকে কিছুতেই একা ছাড়তে রাজি ছিল না তার মা। কিন্তু ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্নে বিভোর ঈশান ঠিকই মাকে বুঝিয়ে রাজি করে ফেলেন, চলে আসেন রাচিতে। সেখানেই চলে তার ক্রিকেটের হাতেখড়ি, সুযোগ পেয়ে যান জেলা পর্যায়ের স্টিল অথরিটি অব ইন্ডিয়া লিমিটেড দলে।
সেখানে গিয়ে এক চরম বাস্তবতার মুখোমুখি হন ঈশান, নিজেরা রান্না করে খেতে হতো। কিন্তু রান্নার কিছুই জানতেন না তিনি, চার জন সিনিয়র ক্রিকেটারের সাথে থাকতে হয়েছে তাকে। রান্না করতে না পারায় ঈশানের দায়িত্ব ছিল সবার থালা-বাসন পরিষ্কার করা, তবুও প্রতিদিনই তার খাবার জুটতো না।
কারণ, তার রুমে থাকা সিনিয়র ৪ ক্রিকেটার গভীর রাত পর্যন্ত অনুশীলন করতেন। এরপর ফিরে রান্না করতেন, কিন্তু ছোট হওয়ায় অত রাত পর্যন্ত জাগতে পারতো না ঈশান। এভাবেই ২ বছর কাটিয়ে দেন, এরপর যেভাবেই হোক তার পরিবার জেনে যান ঈশানের না খেয়ে থাকার বিষয়টি।
ঈশানের পারিবারিক অবস্থা ভালোই ছিল, তার না খেয়ে থাকার খবরে তার বাবা রাচিতে ঈশানের জন্য আলাদা বাসা কিনে দেন। তার মা সুচিত্রা ছেলের কষ্ট বুঝতে পেরে সংসার ছেড়ে তার কাছে চলে আসেন। এরপর আর কষ্টের দিন দেখতে হয়নি ঈশানকে, ঘরোয়া ক্রিকেটে ঝাড়খণ্ডের হয়ে দুর্দান্ত পারফর্মেন্সে ভারতের অনূর্ধ্ব-১৯ দলে ডাক পেয়ে যান।
ঈশান কিষাণের অধীনেই যুব বিশ্বকাপ খেলে ভারত, এরপর আইপিএলে দুর্দান্ত পারফর্মেন্সের ফলে সুযোগ পেয়ে যান জাতীয় দলেও। দীর্ঘ এই পথপরিক্রমায় ছোট্ট বেলায় যদি সে ত্যাগ কিংবা কষ্ট সহ্য করে না নিতেন তাহলে হয়তো আজ ভারতের হয়ে নীল জার্সিটা গায়ে চাপানো হতো না।