পর্তুগালের মাদেইরাই বেড়ে উঠা সেই ছেলেটা নিজের ফুটবল প্রতিভা ও হার না মানা মানসিকতা দিয়ে জয় করেছেন কোটি ভক্তের হৃদয়। মাঠ বা মাঠের বাইরে, কোথায় সফলতার ছোঁয়া পাননি এই ফুটবলার? পর্তুগালের সর্বোচ্চ গোল দাতার খেতাব করে নিয়েছেন নিজের করে। যা করতে পারেনি কিংবদন্তী ইউসেবিও, লুইস ফিগোরা তাই করে দেখিয়েছেন ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো। ‘ইউরো চ্যাম্পিয়নসশীপ’ জয় করে পর্তুগালকে প্রথম আন্তর্জাতিক ট্রফি জয়ের স্বাদ দেওয়ায় বড় অবদান ছিল অধিনায়ক রোনালদোর।
ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো নিয়ে এটা তো নিছক একটা উদাহরণ দিলাম। রোনালদোকে নিয়ে লিখতে গেলে হয়তো পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা লেগে যাবে, তবুও যেন শেষ হবে না। যাই হোক, ওদিকে আর না আগায়, এবার মূল বিষয়ের দিকে আগানো যাক।
হ্যাঁ, বলছিলাম পর্তুগাল থেকে আগত আবাহনী লিমিটেডের কোচ মারিও লেমোসের কথা। প্রায় আড়াই বছর ধরে আকাশী-নীলদের প্রধান কোচের দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। একজন পর্তুগিজ ও ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর দেশের মানুষ হতে পেরেই অন্যরকম অনুভূতি কাজ করে তার মধ্যে। শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্বের যে প্রান্তেই যান না কেন ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর জন্য গর্ব হয় মারিও লেমোসের।

চলমান বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগের প্রথম পর্ব শেষে টেবিল টপার বসুন্ধরা কিংস থেকে নয় পয়েন্টে পিছিয়ে আছে আবাহনী লিমিটেড ঢাকা। মারিও লামোসের অধীনেই চলতি লীগে চার ‘ড্র’ এর পাশাপাশি এক হারে কিছুটা ব্যাকফুটে অবস্থানে ঐতিহ্যবাহী ক্লাবটি। তবে আবাহনী কোচ মারিও লেমোস এখনই হাল ছাড়ছেন না। তিনি বিশ্বাস করেন, আবাহনী লীগের শেষ দিন পর্যন্ত লড়াই করবে।
১২ ম্যাচে ৩৪ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে অবস্থান করছে চ্যাম্পিয়ন বসুন্ধরা কিংস। সমান ম্যাচে ২৫ পয়েন্ট নিয়ে তিনে আবাহনী লিমিটেড ঢাকা। মাঝখানে ২৫ পয়েন্ট নিয়েও গোল গড়ে এগিয়ে থেকে দুই নাম্বারে শেখ জামাল ধানমণ্ডি ক্লাব।
ডেইলিস্পোর্টসবিডির সাথে একান্ত সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশ ফুটবল, পর্তুগাল ও রোনালদো নিয়ে কথা বলেছেন এই পর্তুগিজ কোচ।
ডেইলিস্পোর্টসবিডিঃ
প্রথম যখন বাংলাদেশে আসেন তখন এই দেশের ফুটবল সম্পর্কে আপনার ধারণা কেমন ছিল?
মারিও লেমোসঃ
বাংলাদেশের ফুটবল সম্পর্কে আমার কিছু ধারণা ছিল কারণ আমি অ্যান্ড্রু অর্ডের সাথে বেশ কয়েকবার কথা বলেছিলাম এবং তখন তিনি বাংলাদেশে কাজ করছিলেন। ফলে তার কাছে থেকে এদেশের ফুটবলের কিছু কিছু বিষয় জানতে পারি। এছাড়াও যখন আমি বাংলাদেশে আসার অফার পাই তখন আমি লীগ, খেলোয়াড় ইত্যাদির বিষয়ে জানতে শুরু করে দেই। আর এখন তো বাংলাদেশেই থাকছি (কিছুটা হেসে)।
ডেইলিস্পোর্টসবিডিঃ
আপনি যখন প্রথম এদেশে আসেন তখনকার বাংলাদেশ ফুটবল আর এখনকার বাংলাদেশের ফুটবলের মধ্যে পার্থক্য কেমন দেখেন?
মারিও লেমোসঃ
আমি মনে করি বাংলাদেশ ফুটবলের অনেকটা উন্নতি হয়েছে। ক্লাব গুলো কিছুটা হলেও উন্নতি করেছে এবং আগের থেকে পেশাদারের দিকে এগোচ্ছে। প্রতিটা ক্লাব’ই এখন উন্নত মানের বিদেশি ফুটবলারদের দিকে নজর দিয়েছে। এছারাও ভাল মানের অনেক বাংলাদেশী খেলোয়াড় উঠে আসছে। আমি বিশ্বাস করি এই উন্নতির ধারা অব্যাহত থাকবে।
ডেইলিস্পোর্টসবিডিঃ
গত দুই সিজন ট্রফিলেস ছিলেন। এবারও ফেডারেশন কাপ হাত ছাড়া হয়ে গেছে। লীগেও বসুন্ধরা থেকে অনেকটা পিছিয়ে গেছেন।
মারিও লেমোসঃ
লীগের শেষ দিন পর্যন্ত আমরা লড়াই করতে থাকবো। এখনই যে সব শেষ হয়ে গেছে তেমনটা নয়। তবে আমাদের বিশ্বাস রাখতে হবে যে আমরা পারবো। পয়েন্ট টেবিলের প্রথম অবস্থানে পৌঁছাতে অনেক লড়াই করতে হবে, কেননা আমরা ৯ পয়েন্ট পিছিয়ে আছি। দ্বিতীয় লেগে কি হবে সেটা এখনই বলা যাচ্ছে না, এখনও অনেকটা পথ বাঁকি রয়েছে।
ডেইলিস্পোর্টসবিডিঃ
এবারের মৌসুমে আপনার দলের দুর্বল দিক গুলো কি খুজে পেয়েছেন? যে কারণে পয়েন্ট হারিয়েছেন?
মারিও লেমোসঃ
আমরা অধিকাংশ ম্যাচের দ্বিতীয়ার্ধে ভুগেছি কারণ কিছু ফুটবলারের ফিটনেস এবং ইঞ্জুরি সমস্যা ছিল। আমাদের বেঞ্চেও পর্যাপ্ত খেলোয়াড় নেই যাদের দিয়ে আমি ব্যাকআপ দিতে পারবো। এই মুহুর্তে ইঞ্জুরিতে থাকা খেলোয়াড়দের রিকোভারি করার চেষ্টা করছি এবং তারা যেন দ্বিতীয় পর্বে ফিট থাকে সেটা নিয়ে কাজ করছি।
ডেইলিস্পোর্টসবিডিঃ
সামনে এএফসি কাপের বাছাইপর্ব। আপনার দল এই টুর্নামেন্টের জন্য কতটা প্রস্তুত?
মারিও লেমোসঃ
আমরা ইতোমধ্যে গত ১৮ দিন ধরে অনুশীলন করছি। প্রতিটা সেশনেই কঠোর পরিশ্রম করছে ছেলেরা। আমরা ১৪ ই মার্চের আগে পূর্ন ফিট এবং
সেরা ফর্মে থাকতে চাই। মৌসুমের শুরুতে যে চার বিদেশি ছিল তারাই দলের সাথে থাকছে।
ডেইলিস্পোর্টসবিডিঃ
প্রতি ম্যাচেই আবাহনী ভক্তদের মাঠে উল্লাস করতে দেখা যায়। এই বিষয়টা আপনার কাছে কেমন লাগে?
মারিও লেমোসঃ
আমি ফ্যানদের কার্যক্রমে সব সময় একাগ্রতা প্রকাশ করি এবং তাদের প্রতি আমার যথেষ্ট সম্মান ও ভালবাসা রয়েছে। আমি তাদেরকে উদযাপনের কারণ (জয় ও ট্রফি) বয়ে এনে দিতে চাই। আমি তাদেরকে কখনই ভুলবো না।
ডেইলিস্পোর্টসবিডিঃ
আপনি পর্তুগাল থেকে এসেছেন। পর্তুগাল বিশ্ব ফুটবলের সর্বোচ্চ পর্যায়ে খেলে। পর্তুগালের মানুষ বাংলাদেশ সম্পর্কে কত টুকু জানে?
মারিও লেমোসঃ
হ্যাঁ পর্তুগিজরা বাংলাদেশ সম্পর্কে জানেন, পর্তুগালে এখন একটি বড় বাংলাদেশী সম্প্রদায় বাস করছে। আমি সেখানে বেশ কয়েকজনের সাথে দেখা করেছি যারা পর্তুগালে পরিবার নিয়ে থাকেন। এছাড়া পর্তুগালের স্থায়ী মানুষগুলোও বাংলাদেশ সম্পর্কে কিছুটা জানে।
ডেইলিস্পোর্টসবিডিঃ
পর্তুগাল এবং বাংলাদেশের ফুটবল কাঠামোর মধ্যে কেমন পার্থক্য দেখেন?
মারিও লেমোসঃ
অবশ্যই কিছু পার্থক্য আছে, ইউরোপীয় ফুটবল সাধারণত ভিন্ন গতিতে খেলা হয়, খেলোয়াড়রা খুব দক্ষ । প্রতিটা দলই কৌশলগত ভাবে খুব সুসংহত, তবে বর্তমানে বাংলাদেশ ফুটবলের অনেকেটা উন্নতি করছে, ফুটবলের মান উন্নত হচ্ছে, খেলোয়াড়রা নিজেদের ফিট রাখতে এবং স্কিল উন্নতি করতে প্রতিজ্ঞাব্ধ। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে বাংলাদেশের ফুটবলাররা ফুটবল খেলতে বেশি ভালবাসে।
ডেইলিস্পোর্টসবিডিঃ
ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর দেশ থেকে এসেছেন। রোনালদোকে নিয়ে যদি দুই-এক লাইন বলতেন?
মারিও লেমোসঃ
হ্যাঁ, রোনালদো পর্তুগাল এবং বিশ্বের সবচেয়ে তারকা ফুটবলার। যখন আমি বিশ্বের যে কোনও প্রান্তে গিয়ে বলি আমি পর্তুগালের, তখন সেখানকার মানুষ বলেন, ওহ আপনি রোনালদোর দেশের মানুষ। এটা শুনে গর্বিত হই আমি। রোনালদো দুর্দান্ত একজন ফুটবলার। আমি খুব গর্বিত অনুভব করি যে, তরুণ রোনালদো থেকে শুরু করে এখনও পর্যন্ত তার খেলা দেখতে পাচ্ছি।
ডেইলিস্পোর্টসবিডিঃ
বাংলাদেশে আর কত বছর থাকার ইচ্ছা আছে?
মারিও লেমোসঃ
পেশাদার ফুটবলে আপনি জানেন না আজ বা আগামীকাল কি হবে, আমি প্রথমবার বাংলাদেশে এসেছিলাম প্রায় ৩ বছর আগে। আবাহনীর সাথে আছি প্রায় আড়াই বছর, আমি আবাহনীর সাথে থাকতে পেরে খুশি। তবে ফুটবলের মূল বিষয় হলো সাফল্য। আমি যদি দলের সাফল্য এনে না দিতে পারি তবে ক্লাব আমাকে রাখবে না এটাই স্বাভাবিক। তাই কত দিন এখানে আরও থাকবো তা বলা কঠিন ব্যাপার।
ডেইলিস্পোর্টসবিডিঃ
সর্বশেষ প্রশ্ন, ফুটবলের বাইরে একটি প্রশ্ন করি। বাংলাদেশে কোন খাবারটা সবচেয়ে বেশি খেতে পছন্দ করেন?
মারিও লেমোসঃ
চিকেন বিরিয়ানি।