উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগে কোয়ার্টার ফাইনালে এবার মুখোমুখি হবে লিভারপুল ও রিয়াল মাদ্রিদ। তিন বছর আগে ঘটনাবহুল ফাইনালে লিভারপুলকে হারিয়ে আধুনিক যুগে প্রথম ক্লাব হিসেবে হ্যাট্রিক ইউরোপসেরা হয় প্রতিযোগিতার সবচেয়ে সফল দল রিয়াল মাদ্রিদ।
রাতে সুইজারল্যান্ডের নিওঁতে অনুষ্ঠিত চ্যাম্পিয়ন্স লিগের কোয়ার্টার-ফাইনাল ড্র অনুষ্ঠানে লিভারপুল বনাম রিয়াল নাম আসার পর থেকেই উত্তেজনার পারদ তুঙ্গে। অলরেডরা কি এবার প্রতিশোধ নিবে নাকি ফের ইয়ুর্গেন ক্লপের দলকে কাঁদিয়ে ইউরোপ সেরার আসরে নিজেদের আভিজাত্যের জানান দিবে?
সাম্প্রতিক সময়ে লিভারপুল বনাম রিয়াল মাদ্রিদ যেকোন টপিক ছাড়িয়ে যায় ইউরোপের অন্যসব বিষয়বস্তুও। তিন বছর আগে শিরোপার খুব কাছে গিয়েও নাটকীয় ম্যাচে খালি হাতে ফিরতে হয় মার্সেসাইডের ক্লাবটিকে। কিয়েভের সেই রাত এখনও তাড়া দিচ্ছে অলরেড ফ্যানদের। প্রায় এক যুগ পর ইউরোপ সেরার লড়াইয়ে ফাইনালে উঠেও গোলরক্ষক লরিস কারিয়াসের অদ্ভুত দুই ভুলে শিরোপা হাতছাড়া হওয়ার তীব্র ক্ষতে পরের বছর ইউরোপ সেরা হয়ে কিছুটা প্রলেপ দেয় অলরেডরা।
তবে কিয়েভের সে রাতে প্রথমার্ধে সার্জিও রামোসের সঙ্গে বল দখলের লড়াইয়ে মোঃ সালাহর চোট পেয়ে মাঠ ছাড়ার ঘটনায় কেঁদেছিল মোহাম্মদ সালাহ, তার সঙ্গে কেঁদেছিল কোটি কোটি অলরেড ভক্তরাও। দুঃসহ সেই স্মৃতি কাটিয়ে আবারও মুখোমুখি হচ্ছে দুদল।
প্রতিশোধ নিতে কতটা মুখিয়ে আছে লিভারপুল তার আচ পাওয়া যায় কিছুটা কোচ ইয়ুর্গন ক্লপের কন্ঠেও। শুক্রবার ড্রয়ে দুদলের নাম আসার পর থেকেই ভীষণ উত্তেজনা কাজ করছে জার্মান এই কোচের মধ্যেও, ইয়ুর্গেন ক্লপ মুখিয়ে আছেন ইউরোপের সফল দুই দলের মুখোমুখি লড়াই দেখার জন্য। স্কাই স্পোর্টসকে তৎক্ষনাৎ প্রতিক্রিয়ায় ক্লপ বলেন, “রিয়াল মাদ্রিদের সঙ্গে ম্যাচ বেশ আকর্ষণীয় হবে। খুব কঠিন ম্যাচ কিন্তু অন্য সব দলের দিকে যখন তাকান, তখন বলতেই হবে, ‘হায় ঈশ্বর!’ কারণ, সবাই খুব শক্তিশালী দল। আমি এই ম্যাচ দুটির অপেক্ষায় আছি।”
ইউরোপীয়ান প্রতিযোগিতায় দুই দল প্রথম মুখোমুখি হয় চ্যাম্পিয়নস লিগের আদিম সংস্করণ ইউরোপীয়ান কাপে। ১৯৮১ সালে ইউরোপীয়ান কাপের ফাইনালে রিয়াল মাদ্রিদকে ১-০ গোলে হারিয়ে তৃতীয়বার ইউরোপ সেরা হয় অলরেডরা। সেবার ইতিহাসের প্রথম কোচ হিসেবে তিনটি ইউরোপসেরা ট্রফি জয়ের অনন্য কীর্তি গড়েন লিভারপুলের কিংবদন্তী কোচ বব পেইসলি। মজার বিষয়, প্রায় ৩৭ বছর পর এই লিভারপুলকে হারিয়েই একই গৌরব অর্জন করেন রিয়াল মাদ্রিদের কোচ জিনেদিন জিদান। তিন বছর আগে অলরেডদের হারিয়ে আধুনিক যুগে প্রথম কোচ হিসেবে টানা তিনবার চ্যাম্পিয়নস লীগ জয়েরও রেকর্ড গড়েন ফরাসি কিংবদন্তি কোচ।
অবশ্য এর মাঝেও দুদল আরও চারবার একে অপরের মুখোমুখি হয়েছে। সেখানেও রয়েছে সমতা। লিভারপুলের ২ জয়ের বিপরীতে রিয়াল মাদ্রিদও ম্যাচ জিতেছে দুটি। সবমিলিয়ে দুদলের ছয়বারের মুখোমুখি লড়াইয়ে সমান ৩টি করে জয় পেয়েছে লিভারপুল ও রিয়াল মাদ্রিদ। অবশ্য এখানেও পরিসংখ্যানের মজা রয়েছে, দুদলের প্রথম তিনবারের মুখোমুখি লড়াইয়ে তিনটি ম্যাচই জয় পেয়েছিল লিভারপুল; আর সর্বশেষ তিন ম্যাচ জিতে সেই তিনটি হারের মধুর প্রতিশোধ নেয় লস ব্লাংকোসরা। তাই, এবার যে কোনও একদলের এগিয়ে যাওয়ার পালা।
৭ই এপ্রিল কোয়ার্টার ফাইনালে রিয়াল মাদ্রিদের ঘরের মাঠ আলফ্রেড ডি স্টেফানো স্টোডিয়ামে মাঠে নামবে দুদল। এক সপ্তাহ পর ১৫ই এপ্রিল ফিরতি লেগে অ্যানফিল্ডে ফয়সালা হবে চলতি আসরের সেমিফাইনাল খেলবে কারা। দারুণ একটি রোমাঞ্চকর দ্বৈরথ অপেক্ষা করছে ফুটবল অনুরাগীদের জন্য !
