পর্দা নামলো শেখ রাসেল আন্তর্জাতিক গ্রান্ডমাস্টার দাবা টুর্নামেন্টের
নিউজ ডেস্ক
২৮ অক্টোবর ২০২১, দুপুর ১:৫৫ সময়
পুরস্কার বিতরণীর মধ্য দিয়ে আজ আনুষ্ঠানিকভাবে পর্দা নামল এশিয়ার সর্ববৃহৎ দাবার আসর ‘শেখ রাসেল আন্তর্জাতিক গ্রান্ডমাস্টার টুর্নামেন্টের।’ যেখানে স্বাগতিক বাংলাদেশসহ বিশ্বের ১৮টি দেশের ৩২ জন গ্রান্ডমাস্টার, ২৪জন আন্তর্জাতিক মাস্টারসহ ১০৪ জন খেলোয়াড় অংশ নেন। বাংলাদেশ দাবা ফেডারেশনের উদ্যোগে এবং সাইফ পাওয়ারটেকের পৃষ্ঠপোষকতায় প্রথমবারের মতো এত বড় একটি আয়োজন সম্পন্ন হয়েছে।
১০৩ জন প্রতিযোগিকে পেছনে ফেলে আসরে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করেন পোল্যান্ডের গ্রান্ডমাস্টার মিখাইল ক্রাসেনকভ। ৯ খেলায় ৭ পয়েন্ট পেয়ে শিরোপা জেতেন তিনি। টুর্নামেন্টে রানার্স আপ হয়েছেন ইউক্রেনের ভিটালি বারনাডস্কি এবং তৃতীয় হন ভারতের গ্রান্ডমাস্টার শ্রীনাথ নারায়নান। বাংলাদেশি খেলোয়াড়দের মধ্যে সেরার খেতাব জেতেন গ্রান্ডমাস্টার নিয়াজ মোরশেদ।
আজ রাজধানীর একটি হোটেলে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন সরকারের বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনসি এমপি। অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল এমপি এবং বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক, দাবা ফেডারেশনের সভাপতি ও দক্ষিণ এশিয়ান দাবা কাউন্সিলের সভাপতি ড. বেনজীর আহমেদ, বিপিএম (বার)। এছাড়া অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে সাইফ পাওয়ারটেকের কর্ণধার ও দাবা ফেডারেশনের সহ-সভাপতি শেখ রাসেল আন্তর্জাতিক দাবা আসরের প্রধান পৃষ্ঠপোষক তরফদার মো. রুহুল আমিন, দাবা ফেডারেশনের সহ-সভাপতি কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান ড. চৌধুরী নাফিজ সরাফাত, সহ-সভাপতি কে এম শহিদ উল্যাসহ দাবার অন্যান্য কর্মকর্তা, দেশি-বিদেশি খেলোয়াড়রা উপস্থিত ছিলেন।
দাবার এমন আয়োজন দেখে মুগ্ধতা ঝরেছে বাণিজ্যমন্ত্রীর কণ্ঠে। আর এ আয়োজনের জন্য আসরের প্রধান পৃষ্ঠপোষক সাইফ পাওয়ারটেকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তরফদার রুহুল আমিনকে প্রশংসায় ভাসিয়েছেন তিনি। বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, "এমন একটি অনুষ্ঠানে আসতে পেরে আমার ভীষণ ভালো লাগছে। এতক্ষণ ডায়াসে বসে আমি সবার বক্তব্যই মনোযোগ সহকারে শুনছিলাম। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কনিষ্ঠপুত্র শহীদ শেখ রাসেলের নামে এত বড় একটি আন্তর্জাতিক আসর এখানে অনুষ্ঠিত হয়েছে। সাইফ পাওয়ারটেক এটি পৃষ্ঠপোষকতা করেছে। ডায়াসে সাইফ পাওয়ারটেকের কর্ণধার উপস্থিত রয়েছেন। ওনার কথা আমি প্রায়শই শুনি। ক্রীড়াক্ষেত্রে তার অবদান, সহমর্মিতা, সাপোর্ট শুধু দাবাতে নয়; চট্টগ্রামেও অনেক খেলা তিনি আয়োজন করেছেন। অন্য খেলার সঙ্গেও জড়িত রয়েছেন। তরফদার রুহুল আমিনের প্রতি অনুরোধ রাখব তিনি যেন এই ধারাবাহিতা ধরে রেখে আরো বড় পরিসরে আমাদের সাহায্য করার জন্য এগিয়ে আসেন।" অনুষ্ঠানে বাণিজ্যমন্ত্রী পুলিশ প্রধান ড. বেনজীর আহমেদ এবং ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসানের রাসেলেরও প্রশংসা করেন। তাদের সহযোগিতা না থাকলে এশিয়ার সর্ববৃহৎ দাবার আসরটি যে করা সম্ভবপর হতো না সেটাও মনে করিয়ে দেন। ক্রীড়াক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অবদান এবং বঙ্গবন্ধু পরিবার যে ক্রীড়া অনুরাগী সেটাও অনুষ্ঠানে উল্লেখ করেন বাণিজ্যমন্ত্রী। শেখ রাসেল আন্তর্জাতিক আসরে যে সমস্ত প্রতিযোগী অংশ নিয়েছেন, বিজয়ী হয়েছেন বিশেষ করে যারা বিভিন্ন দেশ থেকে এখানে এসেছেন তাদের অভিবাদন জানান মন্ত্রী।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত সম্মানিত অতিথি ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেলও শেখ রাসেল আন্তর্জাতিক দাবা আসরের পৃষ্ঠপোষক তরফদার রুহুল আমিনের প্রশংসা করেন। ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী বলেন, "তরফদার রুহুল আমিন সাহেবকে আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানাই। তার সাপোর্টেই এত বড় একটি ইতিহাস সৃষ্টি করতে পেরেছে দাবা। ক্রীড়াক্ষেত্রে ভবিষ্যতেও তরফদার রুহুল আমিনের হাত এভাবেই প্রসারিত থাকবে বলে আমার বিশ্বাস।" মন্ত্রী বিশেষভাবে ধন্যবাদ দেন দাবা ফেডারেশনের সভাপতি পুলিশ প্রধান ড. বেনজীর আহমেদকে। তার হাত ধরে দাবা যে এগিয়ে যাচ্ছে সেটা উপস্থিত সকলকে মনে করিয়ে দেন জাহিদ আহসান রাসেল। মন্ত্রী তার বক্তব্যের শুরুতে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টে শহীদ বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্যদের গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন। শহীদ শেখ রাসেলের ৫৮তম জন্মদিন সামনে রেখে এত বড় একটি টুর্নামেন্ট আয়োজন করায় আয়োজকদের ধন্যবাদ জানান ক্রীড়ামন্ত্রী। একই সঙ্গে ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী বলেন , "আজ ক্রীড়াক্ষেত্রে যতটুকু সাফল্য এসেছে, ক্রীড়াক্ষেত্র যতটুকু এগিয়েছে তা কেবল মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার কারণেই হয়েছে।"
অনুষ্ঠানে দাবা ফেডারেশনের সভাপতি পুলিশ প্রধান ড. বেনজীর আহমেদ বলেন, "এই যে আজকে আমরা যে টুর্নামেন্টের পুরস্কার বিতরণ করছি এটি হচ্ছে এশিয়ার মধ্যে দাবার সবচেয়ে বড় টুর্নামেন্ট। এই টুর্নামেন্ট নিয়ে আমরা বাঙালিরা গর্ব করতে পারি। ক্রীড়া বিশেষজ্ঞরা বলছেন ১৯৪৭ সালের পর এত বড় দাবার ইভেন্ট এই অঞ্চলে আর হয়নি। যারা এই টুর্নামেন্টে অংশ নিয়েছেন; সাফল্য অর্জন করেছেন আমার পক্ষ থেকে তাদের জন্য শুভেচ্ছা-শুভ কামনা। ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রীকে বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানাই ওনি সব সময় আমাদের সার্পোট করে যাচ্ছেন। বাংলাদেশে যে দুই-তিনটা ফেডারেশন সক্রিয়ভাবে কাজ করছে; দাবা তার মধ্যে একটি। কিন্তু আমাদের কোনো স্থায়ী ঠিকানা নেই। গত দুই-তিন বছর ধরে আমরা ক্রীড়ামন্ত্রীকে বিষয়টি বলছি। মন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাই ওনি আমাদের জন্য একটা জায়গার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন।"
বাংলাদেশে দাবার অপার সম্ভাবনার কথা উল্লেখ করে বেনজীর আহমেদ আরো বলেন, "দাবা একটা ব্রেইন গেম। বাংলাদেশে এই খেলাটির অপার সম্ভাবনা রয়েছে। আমাদের ফেডারেশন যেভাবে কাজ করে যাচ্ছে এভাবে এগুতে থাকলে এই অঞ্চল আগামী ১০ বছরের মধ্যে দাবার পাওয়ার ক্ষেত্র হতে পারবে। আমরা জাতীয় লিগ, জেলা লিগ, নারী লিগ, স্কুল টুর্নামেন্ট এবং আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টগুলো যদি এভাবে চালিয়ে নিতে পারি তাহলে আগামী তিন থেকে পাঁচ বছরের মধ্যে আমরা নতুন গ্রান্ডমাস্টার পাবো। আমরা আমাদের স্পন্সর, অফিসিয়াল, আমাদের খেলোয়াড়, আমাদের সমর্থক, আমাদের শুভানুধ্যায়ী সবার ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টায় যদি কাজ করতে পারি তাহলে দাবা অনেকদূর এগিয়ে যাবে। আর এগুলো শুধুমাত্র কথার কথা নয়; আমরা করে দেখাতে চাই। কোভিড সিচুয়েশনের মধ্যেও কিন্তু আমরা তিনটা আন্তর্জাতিক আসর আয়োজন করেছি। ৫৫ হাজার ডলারের প্রাইজমানি শেখ রাসেল আন্তর্জাতিক গ্রান্ডমাস্টার টুর্নামেন্ট করেছি। প্রাইজমানির দিক থেকেও কিন্তু এটি এশিয়ার সর্বোচ্চ আসর।"
শেখ রাসেল আন্তর্জাতিক দাবা আসরের প্রধান পৃষ্ঠপোষক সাইফ পাওয়ারটেকের কর্ণধার তরফদার রুহুল আমিন বলেন, "এই টুর্নামেন্টের মধ্য দিয়ে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে সবাই শহীদ শেখ রাসেলকে সবাই জানবে-চিনবে। এশিয়ার সবচেয়ে বড় আসর এটি। ১০৪ জন খেলোয়াড় বাংলাদেশসহ বিশ্বের ১৮টি দেশ থেকে এতে অংশ নিয়েছেন। ৩৩ গ্রান্ডমাস্টার, ২৪ জন আন্তর্জাতিক মাস্টার, বাংলাদেশি গ্রান্ডমাস্টারসহ আরো অনেকে অংশ নিয়েছেন। আসরের বিজয়ী মিখাইলকে আমার পক্ষ থেকে অনেক অনেক অভিনন্দন। একই সঙ্গে রানার্স আপ, তৃতীয়, চতুর্থ অর্জনকারীসহ অন্যদেরও শুভেচ্ছা। এই টুর্নামেন্টে থেকে ৩ জন খেলোয়াড় নর্ম অর্জন করেছে। এটা আমাদের অনেক বড় সাফল্য। বাংলাদেশিদের মধ্যে যারা সেরা হয়েছেন নিয়াজ মোরশেদসহ অন্যদেরকে আমার পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা।"
বক্তব্যের শুরুতে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের কালোরাতে ঘাতকের বুলেটে শহীদ বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেসা, শহীদ ক্যাপ্টেন শেখ কামাল, শহীদ লে. শেখ জামাল, শহীদ শেখ রাসেলসহ সকল শহীদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন তরফদার রুহুল আমিন। অনুষ্ঠানে আগত প্রধান অতিথি বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনসি, সম্মানিত অতিথি ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেলসহ অন্যদের ধন্যবাদ জানান তিনি।
Daily Sportsbd is a sports-based news platform that conveys authentic information and news on sports.