আফ্রিকান ফুটবল থেকে ৪০ বছর পিছিয়ে বাংলাদেশ - ক্রুসিয়ানি
নিউজ ডেস্ক
২৫ জানুয়ারী ২০২২, দুপুর ২:৪৭ সময়
টম সেইন্টফিট। ছবিঃ ইন্টারনেট
২০১৬ সালে বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের কোচ হিসেবে এসেছিলেন বেলজিয়ান কোচ টম সেইন্টফিট। টোগো, জিম্বাবুয়ে, ইথিওপিয়া, মালাউয়ি, নামিবিয়ার মতো একাধিক দেশকে কোচিং করানোর অভিজ্ঞতা নিয়ে আসা সে কোচ বাংলাদেশের ফুটবলে তেমন অবদান রাখতে পারেনি।
তার অধীনেই মালদ্বীপের বিপক্ষে ৫ গোল হজম, এরপর ভুটানের বিপক্ষে হেরে ট্রাজেডি রচনা করেছিল বাংলাদেশ। সেই সেন্টফিট এখন দায়িত্ব পালন করছেন আফ্রিকার দেশ গাম্বিয়া জাতীয় দলের। আফ্রিকা মহাদেশে চলছে আফ্রিকান কাপ অব নেশনস। উক্ত টুর্নামেন্টে এই সেইন্টফিটের অধীনেই বাজিমাত করেছে গাম্বিয়া, উঠেছে কোয়ার্টার ফাইনালে।
[caption id="attachment_63804" align="aligncenter" width="768"] টম সেইন্টফিট। ছবিঃ ইন্টারনেট[/caption]
টম সেইন্টফিটের এই সাফল্য বেশ আলোচনার জন্ম দিয়েছে বাংলাদেশে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন মিডিয়ায় কথা উঠেছে, কি এমন জাদু জানেন সেইন্টফিট? বাংলাদেশকে কোনো সাফল্য এনে দিতে না পারলেও গাম্বিয়াকে নিয়ে সাফল্যের দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন কীভাবে?
এর উত্তর দিয়েছেন বাংলাদেশ জাতীয় দলের সাবেক এবং সাইফ স্পোর্টিং ক্লাবের বর্তমান কোচ আন্দ্রেস ক্রুসিয়ানি। মঙ্গলবার সাইফ স্পোর্টিং ক্লাবের অনুশীলন শেষে গণমাধ্যমের মুখোমুখি হলে টম সেইন্টফিটের এই সাফল্য নিয়ে তিনি বলেন, "আমি আফ্রিকাতে কাজ করেছি। তাই তাদের সম্পর্কে জানি। আফ্রিকার ফুটবল বাংলাদেশ ও দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো থেকে ৪০ বছর এগিয়ে। আফ্রিকার দলগুলো ভীষণ শক্তিশালী।"
[caption id="attachment_63800" align="aligncenter" width="1072"] জাতীয় দলের কোচ ক্যাবরেরার সঙ্গে আন্দ্রেস ক্রুসিয়ানি।[/caption]
২০১৮ ফিফা বিশ্বকাপজয়ী ফ্রান্সের স্কোয়াডের ১৪ জন ফুটবলারই ছিল আফ্রিকা অঞ্চলের। আন্দ্রেস ক্রুসিয়ানি তাই মনে করিয়ে দিলেন, আফ্রিকান ফুটবলারদের জোরেই বিশ্বকাপ জিতেছিল ফ্রান্স। এ বিষয়ে তিনি বলেন, "আপনি কী মনে করেন ফ্রান্স বিশ্বকাপ জিতেছে? জিতিয়েছে সেখানকার আফ্রিকান ফুটবলাররা। আমি ফ্রান্সের সাফল্যকে খাটো করছি না। কিন্তু তাদের বেশিরভাগ ফুটবলার এসেছে আফ্রিকা থেকে। আফ্রিকানরা জিনগত ভাবেই শক্তিশালী।"
আন্তর্জাতিক ফুটবলে বাংলাদেশ কীভাবে সাফল্য পেতে পারে সেটাও বলেছেন সাইফ স্পোর্টিংয়ের এই কোচ। তার মতে বাংলাদেশের ফুটবলে ম্যাচের ফর্মেশন নিয়ে তেমন কাটাছেঁড়া করা হয় না কিন্তু ইউরোপ-আমেরিকার ফুটবলে ফর্মেশন নিয়ে বিস্তর অনুশীলন হয়। "আমাদের দেশসহ (আর্জেন্টিনা) ইউরোপ, আমেরিকায় যে জায়গা নিয়ে বেশি কাজ হয় তা হলো ফর্মেশন। বাচ্চাদের থেকে শুরু করে কিশোরদের-সব জায়গায় এ নিয়ে কাজ হয়। বাংলাদেশেও এ নিয়ে কাজ হওয়া উচিত। এটাই সাফল্যের চাবিকাঠি। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়-আমাদের বেশি বেশি স্ট্রাইকার, গোলস্কোরার লাগবে। তৃণমূলে যদি এ নিয়ে কাজ করা যায় সাফল্য আসবেই।"
"শুধু শিশু-কিশোরদের নিয়ে কাজ করলেই হবে না। অবকাঠামোর উন্নয়ন করতে হবে। আফ্রিকায় দেখবেন বাচ্চারা রাস্তা থেকে শুরু করে সবখানেই ফুটবল নিয়ে ব্যস্ত। এটাই তো পার্থক্য।"
[caption id="attachment_63805" align="aligncenter" width="640"] বাংলাদেশে সাফল্য না পেলেও গাম্বিয়াকে নিয়ে উড়ছেন সেইন্টফিট। ছবিঃ ইন্টারনেট[/caption]
আশি-নব্বইয়ের দশকে বাংলাদেশের ফুটবল নিয়ে সমর্থকদের উৎসাহ উদ্দীপনার কমতি ছিল না। কিন্তু দিন যত গড়িয়েছে দেশের ফুটবল নিয়ে সমর্থকদের আগ্রহ তত কমেছে। তবে বর্তমানে দেশের এত এত জনসংখ্যাকে ফুটবল সমর্থনে কাজে লাগানো উচিত বলে মনে করেন ক্রুসিয়ানি। "এই দেশে ফুটবল আগের মতো জনপ্রিয় নয়, এটাই বড় সমস্যা। আমি মনে করে এই দেশের বিপুল জনসংখ্যা ফুটবল সমর্থনে কাজে লাগানো উচিৎ। ফেডারেশন, ক্লাব, গণমাধ্যম-সবাইকেই একসঙ্গে ফুটবলকে জনপ্রিয় করতে কাজ করা উচিত।"
বাংলাদেশের নতুন কোচ হিসেবেই দায়িত্ব নিয়েছেন স্প্যানিশ হ্যাভিয়ের ক্যাবরেরা। ক্যাবরেরার সঙ্গে মঙ্গলবার দেখা করেছেন আন্দ্রেস ক্রুসিয়ানি। নতুন কোচের উদ্দেশ্যে একটা বার্তা দিয়েছেন এই আর্জেন্টাইন। "আমি ইতোমধ্যে ওকে (ক্যাবরেরা) বলেছি দেখতে থাকো। সবকিছু জানার চেষ্টা করো। আমি ওকে বলেছি এখান থেকে ভালো কাউকে তুমি পাবেই। আমি তার সাফল্যও কামনা করেছি।"
বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের প্রথম লাতিন কোচ ছিলেন এই আন্দ্রেস ক্রুসিয়ানি। ২০০৫ সালে আলফাজ আহমেদ, আরমান মিয়াদের দায়িত্ব নিয়েছিলেন তিনি। তার অধীনে ২০০৫ সালে করাচিতে অনুষ্ঠিত সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে খেলেছিল বাংলাদেশ কিন্তু শিরোপা জিততে পারেনি। ২০০৬ সালে এএফসি চ্যালেঞ্জ কাপের ব্যর্থতার পরপরই বরখাস্ত হতে হয় তাঁকে।
Daily Sportsbd is a sports-based news platform that conveys authentic information and news on sports.